ফুটপাত কী?
শহরে বসবাসকারী সবাই 'ফুটপাত' শব্দটির সাথে পরিচিত। এই ফুটপাতের পরিকল্পানাটি কিন্তু এসেছে মহাসড়ক নির্মাণের সূত্র ধরেই। একঅর্থে এটা মহাসড়কের মতোই। তবে পার্থক্যটা হচ্ছে_মহাসড়কে ভারি যানবাহন চলাচল করে; আর ফুটপাতে সাধারণ মানুষ যাতায়াত করে। বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে ফুটপাতকে সংজ্ঞায়িত করেছেন_সাধারণ জনগণের অধিকৃত পথ, যেখানে পায়ে হেঁটে, যাতায়াত করা যায়, তাকে ফুটপাত বলে।
আবার, তখনকার দিনে বাহন হিসেবে ঘোড়ার প্রচলন ছিল বলে কেউ কেউ ফুটপাতকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন_যেখানে মানুষ পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে অথবা ছোট-যানবাহন নিয়ে চলাচল করে, তাহাই ফুটপাত।
সাধারণত মহাসড়ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফুটপাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। হাইওয়ে তৈরি হওয়ার ফলে দূরপালস্নার বিভিন্ন ভারি যানবাহনের কারণে স্থানীয় সাধারণ জনগণের চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই ফুটপাত তৈরির সূত্রপাত হয়। প্রথম দিকে মহাসড়কের সংস্কারের সময় ফুটপাতের ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পার্ক ও বড় বড় সড়কগুলির সাথে ফুটপাত তৈরি করা হয়। তবে বর্তমানে শহরের ফুটপাতগুলোর চেহারা ফুটপাতের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে।
আহা! ফুটপাতআবার, তখনকার দিনে বাহন হিসেবে ঘোড়ার প্রচলন ছিল বলে কেউ কেউ ফুটপাতকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন_যেখানে মানুষ পায়ে হেঁটে, ঘোড়ায় চড়ে অথবা ছোট-যানবাহন নিয়ে চলাচল করে, তাহাই ফুটপাত।
সাধারণত মহাসড়ক প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফুটপাতের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। হাইওয়ে তৈরি হওয়ার ফলে দূরপালস্নার বিভিন্ন ভারি যানবাহনের কারণে স্থানীয় সাধারণ জনগণের চলাচল বাঁধাগ্রস্ত হওয়ার কারণেই ফুটপাত তৈরির সূত্রপাত হয়। প্রথম দিকে মহাসড়কের সংস্কারের সময় ফুটপাতের ব্যাপারে কোনো পরিকল্পনা করা হয়নি। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পর মানুষের যাতায়াত সুবিধার জন্য ফুটপাত নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন পার্ক ও বড় বড় সড়কগুলির সাথে ফুটপাত তৈরি করা হয়। তবে বর্তমানে শহরের ফুটপাতগুলোর চেহারা ফুটপাতের সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছে।
পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার উদ্দেশ্যেই ফুটপাত বানানো হয়। অথচ নগরীর ফুটপাত দিয়ে আজকাল পথচারীরা হাঁটতে পারে না বললেই চলে। দেখা যায়_কেউ ফুটপাতে গাড়ি রাখছেন, কেউবা রাখছেন দোকানের মালপত্র, কোথাও আবার ফুটপাতের ওপর রয়েছে ফুট ওভারব্রিজের বিম। সব মিলিয়ে ফুটপাতের সুবিধা পথচারীরা সঠিকভাবে ভোগ করতে পারছেন না। নগরীর ফুটপাত নিয়ে আমাদের এবারের মূল ফিচার। লিখেছেন খালেদ আহমেদ
আমাদের সবার প্রিয় ঢাকা নগরীর ফুটপাতগুলোতে পথচারীরা বর্তমানে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করছে। এতে একদিকে যানজট বাড়ছে, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। নগরীর শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, প্রেসক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতগুলো অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের নানা ব্যবহার। যেমন_ফুটপাতের ওপর গাড়ি রাখা হচ্ছে, মোটরসাইকেল চলাচল করছে ফুটপাত দিয়ে, ফুটপাতের ওপর বসেছে দোকানপাট, অনেকে আবার দোকানের জিনিসপত্র রাখছেন ফুটপাতের ওপর, ফুটপাতের ওপর পত্রিকার স্টল ও টিকিট বাসের কাউন্টার, কিংবা ফুট ওভারব্রিজের বিম।
শহরে বসবাসকারী সবাই 'ফুটপাত' শব্দটির সাথে পরিচিত। এই ফুটপাতের পরিকল্পানাটি কিন্তু এসেছে মহাসড়ক নির্মাণের সূত্র ধরেই। পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার উদ্দেশ্যেই ফুটপাত বানানো হয়। পথচারীদের জন্য ফুটপাত বানানো হলেও নগরীর ফুটপাতগুলো ব্যবহার হচ্ছে অন্য কাজে। অনেকেই ফুটপাত দখল করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করলেও তাদের সরানো হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে পুলিশ প্রশাসন ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালালে কিছুদিন ফুটপাতগুলো ফাঁকা থাকে। তবে কয়েকদিন পর পুনরায় দখল হয়ে যায় বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কাছে। ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীদের দুর্ভোগের কথা কেউ মাথায় রাখেন না।
ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক সচেতন নাগরিক নিজের গাড়িটি ফুটপাতের ওপর পার্ক করে রেখেছেন। বিশেষ করে, নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের সামনেই ফুটপাতের ওপর গাড়ি পার্কিংয়ের দৃশ্য চোখে পড়ে। নগরীর মতিঝিল, অভিসার সিনেমা হলের সামনে, পুরানা পল্টন, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট এলাকা, মহাখালি, ধানমণ্ডি, গুলশান ও কাকরাইল এলাকায় ফুটপাতে গাড়ি পাকিংয়ের চিত্র বেশি চোখে পড়ে। ফুটপাতের ওপর গাড়ি রাখার জন্য তাদের এতটুকু অনুশোচনা হয় না যে, তারা আইন মানছেন না। ফুটপাতে পার্কিংয়ের কারণে যানজটসহ পথচারীদের চলাচলের অসুবিধার কথা তাদের মনেই থাকে না।
ফুটপাতে মোটরসাইকেল
নগরীর মোটরসাইকেল চালকদের একটা কথা কখনোই মনে থাকে না যে, ফুটপাত দিয়ে তারা চলাচল করতে পারেন না। ফুটপাত হলো পথচারীদের চলাচলের নিরাপদ জায়গা। অথচ নগরে বের হলেই প্রতিটি সড়কে দেখা যায়, যানজট এড়াতে মোটরসাইকেল চালক ফুটপাতে উঠে পড়ছেন। পথচারী থাকায় তীব্র হর্ন বাজাচ্ছেন। এতে পথচারীদের সমস্যা হয় বলে ফুটপাত ছেড়ে তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামেন। কয়েকজন মোটরসাইকেল চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এটা কোনো অপরাধ নয়। স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই তারা দেখেন ফুটপাত দিয়ে তাদের যাতায়াত।
ফুটপাতে ওভারব্রিজের বিম
যানবাহনের ভিড় এড়িয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ বানানো হয়েছে। কিন্তু এই ওভারব্রিজগুলোও পথচারীদের চলার পথে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। কারণ, রাজধানীর বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ি এসে মিলেছে রাস্তার পাশের ফুটপাতে। ফলে, ফুট ওভারব্রিজের নিচের ফুটপাতগুলো পথচারীরা ব্যবহার করতে পারছে না। ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে মোট ৪৯টি ফুটওভারব্রিজ রয়েছে। ফুট ওভারব্রিজগুলোর বেশিরভাগের সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে রাস্তার পাশের ফুটপাতে। ফলে ফুটপাতে হাঁটার জায়গা কমে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, অনেক ফুটপাতে ফুটওভারব্রিজের সিঁড়িগুলোকে ঘিরে হকাররা ফুটপাতের বাকি অংশটুকু দখল করেছে। আবার কোনো কোনো ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ির নিচে ভ্রাম্যমান মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করায় পুরো ফুটপাতই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। নিউমার্কেটের দুই নম্বর গেটের ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ি ফুটপাতের বেশিরভাগ অংশ দখল করেছে। এ সুযোগে বাকিটুকু দখল করে নিয়েছে হকাররা। কল্যাণপুর ফুট ওভারব্রিজের দুই পাশের সিঁড়িও ফুটপাতে নামানো হয়েছে। উত্তর পাশের সিঁড়ির নিচে হকাররা বসেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ফুট ওভারব্রিজের ফায়ার সার্ভিস প্রান্তের সিঁড়ি পুরো ফুটপাত দখল করে ফেলেছে। মিরপুর ১ নম্বর মোড়ের ওভারব্রিজের মুক্তি পস্নাজার পাশের ফুটপাতের বেশিরভাগ অংশজুড়ে আছে সিঁড়ি। ফুটপাতের বাকিটুকু দখল করেছে ফল ব্যবসায়ীরা। বাংলামোটর ওভারব্রিজের পূর্ব পাশের সিঁড়ির সংযোগ দেয়া হয়েছে নিউ ইস্কাটন রোডের পূর্ব পাশের ফুটপাতে। ফলে, ফুটপাতের পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। পথচারীরা তাই ফুটপাতে না চলে রাস্তা দিয়ে হাঁটে। এই ফুটওভারব্রিজের পশ্চিম পাশের সিঁড়িও ফুটপাতে থাকায় সেখানেও পথচারীরা হাঁটতে পারে না। কারওয়ান বাজারের পশ্চিম তেজতুরী বাজার ফুটওভারব্রিজের সিঁড়িও তৈরি করা হয়েছে দুই পাশের ফুটপাতে। প্রশস্ত সিঁড়িগুলো পুরো ফুটপাতই দখল করে ফেলেছে। ফলে সিঁড়ির নিচের অংশের ফুটপাত দিয়ে লোকজন হাঁটতে পারে না। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ফুটওভারব্রিজের পূর্ব প্রান্তের ফুটপাতে হাঁটার একটু জায়গাও বাকি নেই। ফুটপাতে ফুট ওভারব্রিজ তৈরির বিষয়ে নগরবিদদের ভাষ্য, জনবহুল ক্রসিংগুলোয় পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ দরকার। তবে তা কখনোই ফুটপাতে করা উচিত নয়। পৃথিবীর কোথাও এরকম ফুটপাতের ওপর ওভারব্রিজ বানানোর নজির নেই। এক্ষেত্রে ফুটপাতের পাশের জায়গা অধিগ্রহণ করে সেখানে ফুট ওভারব্রিজ বানানো যেতে পারে। আর জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার যে কারো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। ডিসিসি'র সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা জানান, ফুটপাতে হাঁটার জায়গা নিশ্চিত করা পথচারীদের অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তা পালন করার উপায় নেই। মূলত দুই পাশের জায়গার অভাবেই ফুটপাতে ওভারব্রিজের সিঁড়ি নামানো হচ্ছে।
ফুটপাতে খাবারের দোকান
নগরীর বিভিন্ন স্থানেই ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান। এগুলোর কোনোটা ভ্রাম্যমান, আবার কোনোটা স্থায়ী। রাজধানীর প্রেসক্লাব, পল্টন, কারওয়ান বাজার, গুলিস্তান, মিরপুর, মগবাজার, মালিবাগসহ সবখানেই এরকম দোকানপাট দেখা যায়। কোথাও চায়ের দোকান, কোথাও ফলের দোকান রয়েছে। আবার কোথাও বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। এসব দোকান ও হকারদের জন্য পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারে না।
ফুটপাতে থাকে মালপত্র
রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকাতেই ফুটপাত সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালপত্র তারা ফুটপাতেই রাখেন। এর মধ্যে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, বাড্ডা, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, খিলগাঁও, গোড়ান, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, হাজিপাড়া, মোহাম্মপুর, শ্যামলী, হাজারীবাগ এলাকায় ফুটপাতের ওপর দোকানের মালপত্র রাখতে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকাতেও রয়েছে এই সমস্যা। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, দোকানের সামনে খালি জায়গা নেই। তাই তারা মাঝেমধ্যে ফুটপাতের ওপর কিছু মালপত্র রাখেন। তাদের কাছে এটা দোষের কিছু নয়। তাদের মালপত্র রাখার কারণে পথচারীদের হাঁটতে অসুবিধা হয়-তা জেনেও তারা সেই কাজটি করে চলেছেন দিনের পর দিন।
ফুটপাতে টিকিট কাউন্টার
নগরীর অনেক স্থানেই ফুটপাত দখল করে টিকিট বাসের কাউন্টার গড়ে উঠেছে। শুধু ফুটপাত নয় অনেক স্থানে রাস্তা দখল করে রীতিমত চলে তাদের সার্ভিস ব্যবসা। রাজধানীর প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, গাবতলী, সায়েদাবাগ, বনানীসহ আরো অনেক এলাকাতেই রয়েছে টিকিট বাস সার্ভিসের কাউন্টার। এ সব কাউন্টারের জন্য পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারে না। কয়েকটি বাস সার্ভিসের টিকিট কাউন্টার ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তারা জানান, নাগরিকদের সুবিধার জন্যই তাদের এই সার্ভিস। কাউন্টার করার জায়গা না থাকলে কোথাও যাবে তারা।
আমাদের সবার প্রিয় ঢাকা নগরীর ফুটপাতগুলোতে পথচারীরা বর্তমানে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারে না। তাই তারা বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রধান সড়ক দিয়ে হাঁটাচলা করছে। এতে একদিকে যানজট বাড়ছে, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনার ঘটনাও ঘটছে। নগরীর শাহবাগ, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, প্রেসক্লাব, পল্টন, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, রামপুরা, বাড্ডা, মৌচাকসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতগুলো অনেকটাই দখল হয়ে গেছে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফুটপাতের নানা ব্যবহার। যেমন_ফুটপাতের ওপর গাড়ি রাখা হচ্ছে, মোটরসাইকেল চলাচল করছে ফুটপাত দিয়ে, ফুটপাতের ওপর বসেছে দোকানপাট, অনেকে আবার দোকানের জিনিসপত্র রাখছেন ফুটপাতের ওপর, ফুটপাতের ওপর পত্রিকার স্টল ও টিকিট বাসের কাউন্টার, কিংবা ফুট ওভারব্রিজের বিম।
শহরে বসবাসকারী সবাই 'ফুটপাত' শব্দটির সাথে পরিচিত। এই ফুটপাতের পরিকল্পানাটি কিন্তু এসেছে মহাসড়ক নির্মাণের সূত্র ধরেই। পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটার উদ্দেশ্যেই ফুটপাত বানানো হয়। পথচারীদের জন্য ফুটপাত বানানো হলেও নগরীর ফুটপাতগুলো ব্যবহার হচ্ছে অন্য কাজে। অনেকেই ফুটপাত দখল করে নিজেদের কাজে ব্যবহার করলেও তাদের সরানো হচ্ছে না। মাঝেমধ্যে পুলিশ প্রশাসন ফুটপাত দখলমুক্ত করতে অভিযান চালালে কিছুদিন ফুটপাতগুলো ফাঁকা থাকে। তবে কয়েকদিন পর পুনরায় দখল হয়ে যায় বিভিন্ন শ্রেণীর ব্যবসায়ীদের কাছে। ফুটপাত দখলের কারণে পথচারীদের দুর্ভোগের কথা কেউ মাথায় রাখেন না।
ফুটপাতে গাড়ি পার্কিং
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক সচেতন নাগরিক নিজের গাড়িটি ফুটপাতের ওপর পার্ক করে রেখেছেন। বিশেষ করে, নগরীর বিভিন্ন মার্কেটের সামনেই ফুটপাতের ওপর গাড়ি পার্কিংয়ের দৃশ্য চোখে পড়ে। নগরীর মতিঝিল, অভিসার সিনেমা হলের সামনে, পুরানা পল্টন, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট এলাকা, মহাখালি, ধানমণ্ডি, গুলশান ও কাকরাইল এলাকায় ফুটপাতে গাড়ি পাকিংয়ের চিত্র বেশি চোখে পড়ে। ফুটপাতের ওপর গাড়ি রাখার জন্য তাদের এতটুকু অনুশোচনা হয় না যে, তারা আইন মানছেন না। ফুটপাতে পার্কিংয়ের কারণে যানজটসহ পথচারীদের চলাচলের অসুবিধার কথা তাদের মনেই থাকে না।
ফুটপাতে মোটরসাইকেল
নগরীর মোটরসাইকেল চালকদের একটা কথা কখনোই মনে থাকে না যে, ফুটপাত দিয়ে তারা চলাচল করতে পারেন না। ফুটপাত হলো পথচারীদের চলাচলের নিরাপদ জায়গা। অথচ নগরে বের হলেই প্রতিটি সড়কে দেখা যায়, যানজট এড়াতে মোটরসাইকেল চালক ফুটপাতে উঠে পড়ছেন। পথচারী থাকায় তীব্র হর্ন বাজাচ্ছেন। এতে পথচারীদের সমস্যা হয় বলে ফুটপাত ছেড়ে তারা বাধ্য হয়ে রাস্তায় নামেন। কয়েকজন মোটরসাইকেল চালকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এটা কোনো অপরাধ নয়। স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই তারা দেখেন ফুটপাত দিয়ে তাদের যাতায়াত।
ফুটপাতে ওভারব্রিজের বিম
যানবাহনের ভিড় এড়িয়ে পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ বানানো হয়েছে। কিন্তু এই ওভারব্রিজগুলোও পথচারীদের চলার পথে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। কারণ, রাজধানীর বেশিরভাগ ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ি এসে মিলেছে রাস্তার পাশের ফুটপাতে। ফলে, ফুট ওভারব্রিজের নিচের ফুটপাতগুলো পথচারীরা ব্যবহার করতে পারছে না। ঢাকা সিটি করপোরেশনের একটি সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীতে মোট ৪৯টি ফুটওভারব্রিজ রয়েছে। ফুট ওভারব্রিজগুলোর বেশিরভাগের সিঁড়ি তৈরি করা হয়েছে রাস্তার পাশের ফুটপাতে। ফলে ফুটপাতে হাঁটার জায়গা কমে গেছে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে দেখা গেছে, অনেক ফুটপাতে ফুটওভারব্রিজের সিঁড়িগুলোকে ঘিরে হকাররা ফুটপাতের বাকি অংশটুকু দখল করেছে। আবার কোনো কোনো ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ির নিচে ভ্রাম্যমান মানুষ মলমূত্র ত্যাগ করায় পুরো ফুটপাতই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেছে। নিউমার্কেটের দুই নম্বর গেটের ফুট ওভারব্রিজের সিঁড়ি ফুটপাতের বেশিরভাগ অংশ দখল করেছে। এ সুযোগে বাকিটুকু দখল করে নিয়েছে হকাররা। কল্যাণপুর ফুট ওভারব্রিজের দুই পাশের সিঁড়িও ফুটপাতে নামানো হয়েছে। উত্তর পাশের সিঁড়ির নিচে হকাররা বসেছে। মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর ফুট ওভারব্রিজের ফায়ার সার্ভিস প্রান্তের সিঁড়ি পুরো ফুটপাত দখল করে ফেলেছে। মিরপুর ১ নম্বর মোড়ের ওভারব্রিজের মুক্তি পস্নাজার পাশের ফুটপাতের বেশিরভাগ অংশজুড়ে আছে সিঁড়ি। ফুটপাতের বাকিটুকু দখল করেছে ফল ব্যবসায়ীরা। বাংলামোটর ওভারব্রিজের পূর্ব পাশের সিঁড়ির সংযোগ দেয়া হয়েছে নিউ ইস্কাটন রোডের পূর্ব পাশের ফুটপাতে। ফলে, ফুটপাতের পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। পথচারীরা তাই ফুটপাতে না চলে রাস্তা দিয়ে হাঁটে। এই ফুটওভারব্রিজের পশ্চিম পাশের সিঁড়িও ফুটপাতে থাকায় সেখানেও পথচারীরা হাঁটতে পারে না। কারওয়ান বাজারের পশ্চিম তেজতুরী বাজার ফুটওভারব্রিজের সিঁড়িও তৈরি করা হয়েছে দুই পাশের ফুটপাতে। প্রশস্ত সিঁড়িগুলো পুরো ফুটপাতই দখল করে ফেলেছে। ফলে সিঁড়ির নিচের অংশের ফুটপাত দিয়ে লোকজন হাঁটতে পারে না। সায়েন্স ল্যাবরেটরি ফুটওভারব্রিজের পূর্ব প্রান্তের ফুটপাতে হাঁটার একটু জায়গাও বাকি নেই। ফুটপাতে ফুট ওভারব্রিজ তৈরির বিষয়ে নগরবিদদের ভাষ্য, জনবহুল ক্রসিংগুলোয় পথচারীদের রাস্তা পারাপারের জন্য ফুট ওভারব্রিজ দরকার। তবে তা কখনোই ফুটপাতে করা উচিত নয়। পৃথিবীর কোথাও এরকম ফুটপাতের ওপর ওভারব্রিজ বানানোর নজির নেই। এক্ষেত্রে ফুটপাতের পাশের জায়গা অধিগ্রহণ করে সেখানে ফুট ওভারব্রিজ বানানো যেতে পারে। আর জনস্বার্থে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিয়ে সরকার যে কারো জমি অধিগ্রহণ করতে পারে। ডিসিসি'র সংশিস্নষ্ট কর্মকর্তা জানান, ফুটপাতে হাঁটার জায়গা নিশ্চিত করা পথচারীদের অধিকার। কিন্তু আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে তা পালন করার উপায় নেই। মূলত দুই পাশের জায়গার অভাবেই ফুটপাতে ওভারব্রিজের সিঁড়ি নামানো হচ্ছে।
ফুটপাতে খাবারের দোকান
নগরীর বিভিন্ন স্থানেই ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে খাবারের দোকান। এগুলোর কোনোটা ভ্রাম্যমান, আবার কোনোটা স্থায়ী। রাজধানীর প্রেসক্লাব, পল্টন, কারওয়ান বাজার, গুলিস্তান, মিরপুর, মগবাজার, মালিবাগসহ সবখানেই এরকম দোকানপাট দেখা যায়। কোথাও চায়ের দোকান, কোথাও ফলের দোকান রয়েছে। আবার কোথাও বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেন হকাররা। এসব দোকান ও হকারদের জন্য পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে চলাচল করতে পারে না।
ফুটপাতে থাকে মালপত্র
রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকাতেই ফুটপাত সংলগ্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর মালপত্র তারা ফুটপাতেই রাখেন। এর মধ্যে কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, মিরপুর, বাড্ডা, গুলিস্তান, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকা, খিলগাঁও, গোড়ান, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, হাজিপাড়া, মোহাম্মপুর, শ্যামলী, হাজারীবাগ এলাকায় ফুটপাতের ওপর দোকানের মালপত্র রাখতে বেশি দেখা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য এলাকাতেও রয়েছে এই সমস্যা। এ বিষয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বললে তারা জানান, দোকানের সামনে খালি জায়গা নেই। তাই তারা মাঝেমধ্যে ফুটপাতের ওপর কিছু মালপত্র রাখেন। তাদের কাছে এটা দোষের কিছু নয়। তাদের মালপত্র রাখার কারণে পথচারীদের হাঁটতে অসুবিধা হয়-তা জেনেও তারা সেই কাজটি করে চলেছেন দিনের পর দিন।
ফুটপাতে টিকিট কাউন্টার
নগরীর অনেক স্থানেই ফুটপাত দখল করে টিকিট বাসের কাউন্টার গড়ে উঠেছে। শুধু ফুটপাত নয় অনেক স্থানে রাস্তা দখল করে রীতিমত চলে তাদের সার্ভিস ব্যবসা। রাজধানীর প্রেসক্লাব, পুরানা পল্টন, মতিঝিল, কাকরাইল, মালিবাগ, মগবাজার, বাংলা মোটর, শাহবাগ, ফার্মগেট, শ্যামলী, মিরপুর, গাবতলী, সায়েদাবাগ, বনানীসহ আরো অনেক এলাকাতেই রয়েছে টিকিট বাস সার্ভিসের কাউন্টার। এ সব কাউন্টারের জন্য পথচারীরা ফুটপাত দিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটাচলা করতে পারে না। কয়েকটি বাস সার্ভিসের টিকিট কাউন্টার ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তারা জানান, নাগরিকদের সুবিধার জন্যই তাদের এই সার্ভিস। কাউন্টার করার জায়গা না থাকলে কোথাও যাবে তারা।
No comments:
Post a Comment