Pages

Search This Blog

Wednesday, September 29, 2010

Breakfast spots in Dhaka

Breakfast spots in Dhaka

For the best kinds of breakfast in town, Dhaka city is full of places to suit your satisfaction. We have assembled a list of places for you to go and make the best out of you early meal.
For continental breakfast the places to go are:

Café Mango
Situated in Dhanmondi road# 5 and Banani (right behind United Hospital), Café Mango offers breakfast such as sausages, cold sandwiches and some coffee. It's light and refreshing yet extremely fulfilling - tastewise! Café Mango is open from 11am onwards.

Cuppa Coffee
Cuppa Coffee has a breakfast set including eggs, sausages, toast and coffee. You could order some fresh orange, mango or papaya juice to set your mood for the morning. Along with that you have different kinds of healthy smoothies and other drinks, whichever suits you best! Cuppa Coffee opens at 11am.

La Vinci restaurant
Hotel La Vinci, in Kawran Bazaar, has an authentic and exclusive restaurant serving mouth-watering and scrumptious Italian cuisine. Food lovers come here for, among others, the tiramisu (an Italian dessert made with marscapone cheese, sponge cake and coffee) and cannelloni (a specialty containing cheese, chicken and pasta). La Vinci opens at 6 am.

Pizza Hut
Pizza hut, situated in Dhanmondi, Gulshan and Bailey road, offers you breakfast such as pasta and more. You can fulfil your appetite for the morning with a small sized cheese pizza to go with some fresh juice. Pizza Hut opens around 11am.

Cofi 11
Cofi 11, in Gulshan, opens at 11am and has amazing waffles for breakfast. Waffles are just one of the examples, you'll get everything there to get you going for the morning. Coffee, juice and any drink that suits your mood to go with your waffles or pie.

Red Shift
Situated in Gulshan 2, Red shift has breakfast delicious enough to keep you there for lunch and dinner. Waffles and sandwiches to go with healthy sausage salad and fresh juice or coffee is a common favourite. Red Shit is open around 11am.

Radisson
Radisson is well known across the globe for its undoubted class. Along with everything else, it offers classy breakfast as well! Anything and everything you desire for a healthy breakfast, you'll get in Radisson. And if you're staying there, there's no question about it. Along with your wonderful stay, you get some wonderful breakfast.

Westin
Much like Radisson, Westin offers a great breakfast of international cuisines. Aware of your health type, you can get exactly what you need.
For some delicious deshi breakfast you might want to try:

Star restaurant
Star restaurant opens at 5:30 am and offers the most amazing breakfast. The special paratha, chicken soup, mixed vegetables and daal will keep you coming back for more. To top it off, they have delicious tea to end your meal with a smile on your face. Star restaurant has branches all over Dhaka.

Ullash
Ullash also serves paratha, naan and anything that goes with them. Chicken, beef, vegetables and much more. Ullash opens around 6 am for joggers around Dhanmondi 11A and 12A. It's right between the two!

Bashori
This is a restaurant specializing in Bangladeshi food. You can order numerous kinds of delicious dishes ranging from the regular rice, biriani, vegetables, fish and meat items. Go for their local fish delicacies ranging from Ruhi, Koi, Hilsa, Kachki, Pabda - fried or curried, you choose! The same is true for poultry, beef and mutton items which include Kima Mattar and Chicken Jhal Fry. The interior is chic with intricate woodcarvings adorning the walls. The surrounding is cosy and relaxing with a selection of good food! It opens at 8.30 am for breakfast and is situated in Kemal Ataturk avenue.

Prince restaurant
Opening at 9.30 am, this deshi eatery has been around for some time now, and the guys over there promise 'princely' service! Some of their local delicacies include steaming birianis, tangy seafood curries, and chicken rezalla, all to go with everyone's favourite - plain boiled rice! Though the ambience is not particularly appealing, Prince has good food to offer, as well as friendly service! It's situated in National Stadium market.

Café Jheel
Situated in the busy business hub of town in Motijheel, this restaurant is extremely popular among office goers. They prepare the usual local items but are a cut above their competition! Café Jheel's chicken jhaal fry is an essential and their warm soft naans go nicely with a cup of warm tea! Café Jheel opens at 9.30 am.

Dhanshiri
Dhansiri specializes in typical tasty Bengali cuisine and they have stuck to their promise of providing hygienically prepared and low priced traditional dishes for the past 14 years. Dhanshiri opens at 11am for breakfast.

By Naziba Basher

অতিথি ও পর্যটকদের চোখে ঢাকা

অতিথি ও পর্যটকদের চোখে ঢাকা

সৈ য় দ আ ব দা ল আ হ ম দ
চাঁদ জয় করে পৃথিবীতে ফিরে এসে তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, এডউইন অলড্রিন ও মাইকেল কলিন্স বিশ্ব ভ্রমণে বের হয়েছিলেন। ভ্রমণের অংশ হিসেবে তাঁরা ঢাকায়ও এসেছিলেন। ঊনষাট সালের সেই ঐতিহাসিক দিনটিতে তেজগাঁও পুরনো বিমানবন্দরে ঢাকার কৌতূহলী মানুষকে নীল আর্মস্ট্রং ও তার সঙ্গীরা চন্দ্র বিজয়ের গল্প শুনিয়েছিলেন। আর বলেছিলেন, ‘তোমাদের ছিমছাম নিরিবিলি ঢাকা শহরটি অপূর্ব।’
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কয়েকবারই এসেছেন ঢাকায়। ১৯২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ঢাকায় এলে বুড়িগঙ্গা নদীর বাকল্যান্ড বাঁধ সংলগ্ন করোনেশন পার্কে কবিকে দেয়া হয় জমকালো সংবর্ধনা। ‘তুরাগ’ নামে ঢাকার নবাবের বজরাটি কবির বিশ্রামের জন্য সুসজ্জিত করে রাখা হয়েছিল। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ঢাকার মানুষের আতিথেয়তায় অভিভূত হয়েছিলেন কবি। এরপর ঢাকার বলধা গার্ডেন দেখতে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ফুল আর প্রকৃতির সান্নিধ্যে বেশ কিছুক্ষণ নীরবে কাটিয়েছিলেন। ধারণা করা হয় ‘ক্যামেলিয়া’ কবিতাটি বলধা গার্ডেনে বসেই লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ।
কিংবদন্তির মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী ঢাকায় এসেছিলেন সত্তরের দশকে। মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে দেখতে ঢাকা স্টেডিয়াম উপচে পড়েছিল মানুষ। সেদিন তিনি ঢাকার মানুষকে আনন্দ দেয়ার জন্য মুষ্টিযুদ্ধের একটি প্রদর্শনী ম্যাচও খেলেছিলেন। মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে তার হাতে ঢাকার চাবি তুলে দেয়া হয়েছিল। আর মোহাম্মদ আলী বলেছিলেন, ‘ঢাকায় এসে আমি মুগ্ধ, এটা আমার প্রিয় শহর।’
দুনিয়ার এমন অনেক বিখ্যাত মানুষ ঢাকায় অতিথি হয়ে এসেছেন। তাদের মধ্যে যেমন আছেন রাষ্ট্রনায়ক, রাজা-রানী, শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, অর্থনীতিবিদ ও বিজ্ঞানী; তেমনি আছেন বিশ্বের অনেক পর্যটকও। জাতিসংঘের দুজন মহাসচিব ডক্টর কুর্ট ওয়াল্ডহেইম ও জেভিয়ার পেরেজ দ্য কুয়েলার ঢাকা সফর করেছেন। তৃতীয়বার জাতিসংঘ মহাসচিব হিসেবে এসেছেন কফি আনান। ঢাকায় এসেছেন মহাত্মা গান্ধী, মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, নেলসন ম্যান্ডেলা, ইয়াসির আরাফাত, রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার। এসেছেন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী প্রফেসর আবদুস সালাম, মাদার তেরেসা, অমর্ত্য সেন, গ্যুন্টার গ্রাস। এসেছেন হলিউডের নায়িকা অড্রে হেপবার্ন, গানের অতিথি কুন্দন লাল সায়গল, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ, রবি শঙ্কর, কানন বালা, মেহেদী হাসান, নূরজাহান, গোলাম আলী এমনি আরও অনেকে।
একসময় বুড়িগঙ্গা তীরের এই বিচিত্র নগরীকে প্রাচ্যের রানী ঢাকা নামে ডাকা হতো। এই নগরীর বয়স চারশ’ বছর হয়ে গেল। পরিবর্তনশীল ভাগ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গড়ে ওঠা এই নগরী আকর্ষণ করেছে ওইসব বিদেশি পর্যটক আর দুনিয়ার বিখ্যাত সব মানুষকে। এই নগরীর মায়াবী আকর্ষণে তারা ছুটে এসেছেন এখানে হাজার হাজার মাইল দুর্গম পথ পেরিয়ে। এদের কেউ এসেছেন মোগল যুগে, কেউ এসেছেন ব্রিটিশ যুগে। আবার কেউবা পাকিস্তান শাসনামলে কিংবা স্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমানকালে ঢাকা সফর করেছেন। অনেকে লিখেছেন তাদের অভিজ্ঞতার কথা, এই নগরীর জীবনধারার কথা।
ভ্রমণকারী পর্তুগিজ যাজক সিবাস্টিয়ান ম্যানরিখ ১৬৪০ সালের দিকে ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকা শহরে তাঁর অবস্থানকাল ছিল ২৭ দিন। এই অল্প কয়দিনে তিনি যা দেখেছেন এবং শুনেছেন তা লিখে গেছেন। ওই সময়ের শহরের বর্ণনা দিতে গিয়ে ম্যানরিখ মন্তব্য করেন, ‘এটিই হচ্ছে বাংলার প্রধান শহর আর দেশের সবচেয়ে উচ্চ পদাধিকারী নবাব বা ভাইসরয় বা প্রতিনিধির কার্যস্থল, যাকে সম্রাট নিয়োগ দেন। এই প্রতিনিধিদের দায়িত্ব সম্রাট বেশ কয়েকবারই তার নিজস্ব কোনো সন্তানের ওপরই অর্পণ করেন। এই নগরীটি বিরাট এবং অতি সুন্দর এক সমতল ভূমিতে এবং এখানে ফলবান গঙ্গা (বুড়িগঙ্গা) নদীর পাড়ে অবস্থিত। এর পাড় ঘেঁষেই শহরটি প্রায় দেড়লীগ (প্রায় সোয়া পাঁচ মাইল)-এর বেশি স্থান পর্যন্ত প্রসারিত। এই শহরে ব্যবসা-বাণিজ্য উপলক্ষে বিচিত্র জাতির মানুষ আসেন। নানান ধরনের পণ্যের বিরাট ব্যবসা এখানে হয়। এসব পণ্য বেশিরভাগই এ অঞ্চলের উত্তম ও অতি উর্বর ভূমি থেকেই উত্পাদিত হয়। এই ব্যবসা-বাণিজ্য নগরটির জন্য এত ধন-সম্পত্তি এনেছে যা ভাবলে স্তম্ভিত হতে হয়। বিশেষ করে এখানকার যাত্রীদের (মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীদের) বাড়িতে যে পরিমাণ টাকা আছে তা গণনা করা অসম্ভব ভেবে এগুলো ওজন করা হয়। আমাকে বলা হয়েছে, গাঙ্গেয় এই বিশাল বাণিজ্য কেন্দ্র এবং এর উপকণ্ঠে দুই লাখেরও অধিক লোক বাস করে। বিস্মিত হওয়ার আরও কারণ রয়েছে। আর তা হলো প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের বিপুল সরবরাহ। এর বিভিন্ন বাজারে এমন কোনো পণ্য নেই, যা মানুষের কামনার বাইরে। এই নগর থেকে সম্রাট এবং অন্যান্য মোগল শাসনকর্তা যে পরিমাণ আর্থিক সুবিধা লাভ করেন তা অবিশ্বাস্য। শুধু এটুকুই বলতে চাই, কেবল পান বা ভারতীয় পাতা থেকেই তারা প্রতিদিন ৪ হাজার রুপি শুল্ক পেয়ে থাকে। ম্যানরিখ আরও উল্লেখ করেন, ‘এই অঞ্চলেই সবচেয়ে সূক্ষ্ম এবং উত্কৃষ্ট মসলিন তৈরি হয়। ৫০ থেকে ৬০ গজ লম্বা আর ৭ থেকে ৮ হাত চওড়া এ কাপড়গুলোতে সোনালি ও রুপালি রঙের রেশমের পাড় আছে। এসব বস্ত্র এত সূক্ষ্ম যে ব্যবসায়ীরা এক হাত লম্বা ফাঁকা বাঁশের ভেতরে এগুলো ঢুকিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিতরণের জন্য নিরাপদে বহন করতে পারত। আর এরূপ দৃঢ়ভাবে স্থাপিত করে এগুলো খোরাসান, পারস্য, তুরস্কসহ দূরদূরান্তের দেশে নিয়ে যায়। ঢাকার বৈদেশিক বাণিজ্য সম্পর্কে ম্যানরিখ লিখেছেন, এটা এত ব্যাপক ছিল যে, একশ’রও বেশি পণ্যভর্তি জাহাজ বিদেশে চালান যেত। রফতানি পণ্যের মধ্যে কাপড়, চাল, চিনি, তেল ছিল প্রধান।
১৬৬৩ সালে ইতালীয় পর্যটক ও ঐতিহাসিক নিকোলো মানুচ্চি ঢাকায় আসেন। স্বল্পদিন অবস্থান করেন তিনি। ঢাকাকে তিনি মাঝারি ধরনের শহর হিসেবে উল্লেখ করেন। তবে আয়তনের তুলনায় তখন লোকসংখ্যা ছিল বেশি। তিনি লিখেছেন, ঢাকার অধিকাংশ বাড়িঘরই খড়ের তৈরি। তবে কিছু কিছু ইটের তৈরি বাড়িঘরও ছিল। সেগুলো বেশিরভাগই বিদেশিদের। বিদেশি বাসিন্দাদের মধ্যে ইংরেজ, ওলন্দাজ এবং পর্তুগীজদের সংখ্যা ছিল বেশি।
ফরাসি ব্যবসায়ী পর্যটক টাভার্নিয়ার ১৬৬৬ সালে প্রাচ্যের রহস্যনগরী ঢাকায় এসেছিলেন। ঢাকায় তাঁর অবস্থান ছিল মাত্র ষোল দিনের। এ স্বল্পকালীন অবস্থানে তিনি দু’বার নবাব শায়েস্তা খানের সঙ্গে দেখা করেন এবং ফ্রান্স থেকে তিনি যেসব অলঙ্কার ও রত্নাদি এনেছিলেন তা বিক্রি করেন। ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার সময় তিনি প্রায় ১১ হাজার টাকা মূল্যের পণ্যসামগ্রী ক্রয় করেন। টাভার্নিয়ার ঢাকাকে অনেক বড় শহর বলে উল্লেখ করেন। দৈর্ঘ্য ছয় মাইলেরও বেশি। শহরের স্থানীয় বাসিন্দাদের কথা বলতে গিয়ে তিনি লিখেছেন, এদের অধিকাংশ কাঠমিস্ত্রি, নৌকা তৈরি করা এদের প্রধান কাজ। বাঁশ ও কাদামাটির তৈরি বাড়িঘরে এরা বসবাস করে। টাভার্নিয়ার এ বাড়িগুলোকে মুরগির ঘর বলে মন্তব্য করেন। টাভার্নিয়ার ঢাকাকে একটি বৃহত্ বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বর্ণনা করে লেখেন, মোগল সাম্রাজ্যের ১২টি বাণিজ্য কেন্দ্রের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম।
১৮২৪ সালে কলকাতার বিশপ রেভারেন্ড হেবার ঢাকা শহরে আসেন। এখানে ২২ দিন তিনি অবস্থান করেন। হেবারের ভাষায় : যে নদীর তীরে ঢাকা অবস্থিত তার রূপ অনেক বদলে গেছে। রেনেলের মানচিত্রের সঙ্গে এর কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যায় না। ওই সময় এই নদীটি ছিল সরু কিন্তু এখন এমনকি গ্রীষ্মকালেও কলকাতার হুগলি নদীর চেয়ে কোনো অংশে ছোট নয়। ঢাকায় হেবার তত্কালীন কালেক্টর মি. মাস্টারের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। তার কাছ থেকে শোনা ঢাকার বর্ণনা থেকে হেবার লিখেছেন, ঢাকা এখন প্রাচীন গৌরবের ধ্বংসাবশেষ মাত্র। এর বাণিজ্য পূর্বাপেক্ষা ষাট ভাগ কমে গেছে। ঢাকার সুরম্য অট্টালিকা, শাহ জাহাঙ্গীর নির্মিত দুর্গ, তার তৈরি মসজিদ, প্রাচীন নবাবদের রাজপ্রাসাদ, ওলন্দাজ, ফরাসি এবং পর্তুগিজদের ফ্যাক্টরি ও চার্চ সবই ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং জঙ্গলে ঢেকে গেছে। মোগল যুগের ঢাকা থেকে কোম্পানি আমলের ঢাকার অনেক পার্থক্য তার বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়।
১৮৪০ সালে ঢাকায় আসেন বেঙ্গল ইঞ্জিনিয়ার্সের লে. কর্নেল সিজেসি ডেভিডসন। দূর থেকে আবছাভাবে ডেভিডসনের চোখে পড়ল ঢাকা। চারদিকে ঘন কুয়াশা। এর মধ্যে যে জিনিসটি নজরে এলো, তা হলো শহরের বিপরীতে নদীর পশ্চিম দিকে উঁচু ও স্থায়ী এক দোতলা বাড়ি। শহরটি বুড়িগঙ্গার পূর্ব তীরে। লম্বায় হবে প্রায় দুই মাইল। তিন চার মাইল দূর থেকে বা টেলিস্কোপ দিয়ে দেখলেও ভারি সুন্দর দেখায় শহরটি। ঢাকায় পা রেখে ডেভিডসন দেখলেন, এক টাকা খরচ করলে পাওয়া যায় ২৫৬টি কমলা আর দুই টাকা খরচ করলে একটি বেহালা। দিন রাত সারাক্ষণ ঢাকায় শোনা যায় বেহালার সুর। আবার এও দেখলেন, অরণ্য গ্রাস করছে শহর। ডেভিডসন লিখেছেন, শহর ঘিরে আছে যে জঙ্গল তা এড়িয়ে চলবেন, বিশেষ করে সূর্যাস্তের সময়। এ বিষয়ে আমি তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি। ওই সময় জঙ্গল ও শহরের সীমান্ত পেরোবার বা শহরে ঢোকার সময় শরীর হঠাত্ শিউরে ওঠে।
ঊনিশ শতকের তিরিশের দশকে সিভিল সার্জন হিসেবে ঢাকায় এসেছিলেন ডাক্তার জেমস টেইলর। পরের বছর ‘টপোগ্রাফি অ্যান্ড স্ট্যাটিসটিকস অব ঢাকা’ পুস্তক আকারে বের হয়। টেইলর ঢাকা সম্পর্কে লিখেছেন, ধলেশ্বরী ও বুড়িগঙ্গা যেখানে মিলেছে, তার প্রায় মাইল আটের ওপরে বুড়িগঙ্গার উত্তরে অবস্থিত ঢাকা। নদীটি গভীর ও উপযোগী বড় বড় নৌকা চলাচলের। বর্ষাকালে নদী ভরে যায় এবং বড় বড় মিনার ও অট্টালিকাশোভিত ঢাকা নগরীকে মনে হয় ভেনিসের মতো।
সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন ব্রাদার রবার্ট। প্রথম ঢাকা আসেন ১৯৪৬ সালের জানুয়ারি মাসে, নদীপথে কলকাতা থেকে। সে সময় ব্রিটিশ এবং আমেরিকান সৈন্যরা ঢাকা থেকে চলে যাচ্ছিল। ১৯৬৮ সালে তিনি সেন্ট গ্রেগরিজ হাইস্কুলে যোগ দেন। আমেরিকান নাগরিক ব্রাদার রবার্ট ১৯৭৫ সালে বর্ণনা করেছিলেন তার ঢাকার অভিজ্ঞতা : ‘আমি প্রথম এসে যে ঢাকাকে দেখেছি ঢাকা এখন তার চাইতে অনেক বিস্তৃত, অনেক সফিসটিকেটেড। প্রথম ঢাকায় এসে একটিমাত্র বিশাল রাস্তা দেখেছি, সেটি জনসন রোড। নদী থেকে যুদ্ধের সরঞ্জাম বিমানবন্দরে নেয়ার জন্য একটা পথ সে সময় তৈরি করা হয়েছিল। স্টেশন ছিল ফুলবাড়িয়ায়। রমনা এলাকায় গোটাকয়েক দালানকোঠা ছিল। তেজগাঁও বিমানবন্দর সে সময় যুদ্ধের জন্য তৈরি হয়েছিল। মগবাজার তখন এক গ্রামীণ হাট মাত্র। শুধু আহসান মঞ্জিলই ছিল হ্যান্ডসাম বিল্ডিং। নদীতে লঞ্চ দেখিনি কখনও। স্টিমার যেত গোয়ালন্দ পর্যন্ত। নদীতে চলাচলের একমাত্র উপায় ছিল গয়না নৌকা। ইসলামপুরের কয়টা পথ বাদে আর সব পথ ছিল সরু। ধোলাইখাল ছিল। সব মিলিয়ে সে সময়ের ঢাকা মনে হয়েছে ইন্টারেস্টিং। অনেক ভিড় ছিল না, অনেক যানবাহন ছিল না। সে সময় যদিও ইলেকট্রিসিটি ছিল। তবু খুব কম দোকানে বৈদ্যুতিক আলো ছিল। প্রায় সব দোকানে রাতে জ্বলত কুপিবাতি। রমনা, তেজগাঁও এলাকা সে সময় পুরনো ঢাকা থেকে ছিল বিচ্ছিন্ন। টঙ্গী ছিল ছোট্ট একটা এলাকা। সেকালেও যানবাহন বলতে পথে দেখা যেত শুধুই এক্কাগাড়ি। আমেরিকানরা যাওয়ার সময় বিস্তর যুদ্ধের ট্রাক নিলামে বেচে গিয়েছিল। সেগুলোকে রদবদল করে বাস বানিয়ে নামানো হলো ঢাকার পথে। রিকশা ছিল না একদম। ট্যাক্সি দেখেছি কিনা মনে করতে পারি না। ঢাকা থেকে বাইরে যাওয়ার একমাত্র সড়ক ছিল নারায়ণগঞ্জের দিকে। ট্রেন ও গয়না নৌাকা ছাড়া বাইরে যাওয়ার পথ ছিল না। ওরিয়েন্ট এয়ার বলে একটা বেসরকারি বিমান কোম্পানিই বোধ হয় প্রথম ঢাকায় বিমানের সার্ভিস প্রবর্তন করে। পরে এলো পিআইএ।
সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন ব্রাদার হোবার্ট। যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ হোবার্ট ঢাকাকে দেখেছেন ১৯৪৮ সাল থেকে। ১৯৭৫ সালে ঢাকা সম্পর্কে তার বর্ণনা : সে সময় ভিক্টোরিয়া পার্কের আশপাশই ছিল সবচেয়ে ব্যস্ত এলাকা। কেনাকাটা করতে মানুষ আসত চকবাজারে। এখানকার সাহেব-সুবাদের মতে, তখন কেউ নিউমার্কেটে যেত না। সেকালের সিনেমা হল ব্রিটানিয়ার পাশ দিয়ে নিউমার্কেট যাওয়ার একটা সরু পথ ছিল। তার আশপাশ কেবল জঙ্গলে ভরা। লাল ইটের বাড়িগুলোতে বিলেতি সাহেবরা থাকতেন। গুলিস্তান ছিল না। আজকের জিপিও ছিল পুরনো দালানে। মাছ পাওয়া যেত বিস্তর। আজকাল ঢাকায় সাপ দেখি না। আগে সাপ, বেজি, সজারু এই শহরে দেখা যেত অহরহ। শিম, বেগুন দু’আনা সের থেকে দশ পয়সা বাড়লে, ঢাকার মানুষ মাথায় হাত দিত। দু’আনা দিয়ে তরমুজ কিনে ভাবত হয়তো ঠকেছি। বিয়ের যৌতুক হিসেবে তখনও ট্রানজিস্টর আসেনি। জামাইরা প্রথমে দাবি করত রুমাল। তারপর বিয়ের বাজারে একটি র্যালি সাইকেল। মোঘল সুবাদার ইসলাম খাঁ ১৬০৮ সালে মতান্তরে ১৬১০ সালে ঢাকায় এসেছিলেন। সে থেকেই ঢাকার প্রতিষ্ঠাকাল ধরা হয়। যদিও ঐতিহাসিক অধ্যাপক হাসান দানীর মতে, ঢাকার বয়স এক হাজার বছরেরও বেশি। কলকাতার অনেক আগের শহর এই ঢাকা। ঢাকা এখন স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী। এর আগে এই ঢাকা সুবা-বাংলার রাজধানী এবং দু’বার প্রাদেশিক রাজধানীর মর্যাদা পেয়েছে। স্বাধীন দেশের রাজধানীরূপে বিগত ৩৬ বছরে ঢাকার পরিধি অনেক বেড়েছে। বেড়েছে জনসংখ্যাও। বিশ্বখ্যাত অতিথিরা আসছেন এই নগরীতে। মাত্র কয়েক বছর আগে এই নগরীর আতিথ্য গ্রহণ করেছেন বিশ্বের সেরা ধনী মানুষ বিল গেটস। নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় এসেছিলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন। দিল্লি থেকে এয়ারফোর্স-১-এ করে আসার সময় আকাশ থেকে তিনি বললেন, ‘প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ আপনাদের দেশটি ও রাজধানী শহর ঢাকা খুব চমত্কার। এই ঐতিহাসিক নগরীতে আসতে পেরে আমি গর্বিত।’ প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের আগে এসেছিলেন তার পত্নী যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্টলেডি হিলারি ক্লিনটন। তার সম্মানে ২৯ হেয়ার রোডে (রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায়) রাষ্ট্রীয় নৈশভোজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন ছিল। অনুষ্ঠান শেষ করে গাড়িতে ওঠার আগে সাংবাদিকদের হিলারি ক্লিনটন বললেন, ঢাকার স্মৃতি আমি ভুলব না। আপনারা খুবই সৌভাগ্যবান। আপনাদের একজন নারী প্রধানমন্ত্রী এবং আরেকজন নারী বিরোধীদলীয় নেত্রী। এ ব্যাপারে আমাদের দেশ এখনও রক্ষণশীল। নারীরা এ পর্যায়ে আসতে পারেনি। তখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। আর বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন শেখ হাসিনা। হিলারি ক্লিনটন তার আত্মস্মৃতি নিয়ে যে বই লিখেছেন সেখানেও আছে ঢাকার কথা। এ নগরীতে পিঁপড়ের সারির মতো এত মানুষের উপস্থিতির কথা তিনি তুলে ধরেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারও দু’বার ঢাকায় আসেন। একবার তিনি তার পত্নীকে সঙ্গে নিয়ে রিকশায় করে রমনা পার্কের সামনের রাস্তায় বেড়িয়েছিলেন। দ্বিতীয়বার তিনি মিরপুর বোটানিক্যাল গার্ডেনে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে পাখির কলরব আর প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করেছেন।
কিংবদন্তির গায়ক কুন্দন লাল সায়গল ঢাকায় এসে ডিমলার গাড়ি আর ঘোড়ার গাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন। ঢাকার রাস্তায় তিনি গেয়েছেন, ‘আমার বীণায় গান আছে, আর তোমার বীণায় সুর আছে গো সুর আছে।’ কানন বালা ঢাকায় এসে ‘আমি বন ফুল গো’ গানটি গেয়ে ঢাকার মানুষকে অভিভূত করেছিলেন।
আশির দশকে ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ঢাকায় এসে বলেছিলেন, এই ঐতিহাসিক নগরী আমার মনে দাগ কেটেছে। ট্রেনে করে ঢাকা থেকে রানী গিয়েছিলেন গাজীপুরের বৈরাগীরচালা গ্রামে। সেখানে তিনি ঢেঁকিতে ধান ভানা, মুড়ি ভাজা ও মুরগি পালনসহ মানুষের জীবনধারা উপভোগ করে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মহাত্মা গান্ধী, নেলসন ম্যান্ডেলা, মাদার তেরেসা ঢাকায় এসে শান্তির বাণী শুনিয়ে গেছেন। চারশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই ঢাকা নগরী আমাদের গর্বের প্রিয় নগরী।

Tuesday, September 28, 2010

DHAKA: General Information


Dhaka is the capital and largest city of Bangladesh. With its colourful history and rich cultural traditions, Dhaka is known the world over as the city of mosques and muslin. Its fame attracted travelers from far and near throughout the ages. Today it has grown into a megacity of about 8.5 million people, with an area of about 1353 sq. km. becoming the hub of the nation's industrial, commercial, cultural, educational and political activities.

Dhaka sits on the north bank of the bustling Buriganga River, roughly in the centre of the country. If you've arrived in Dhaka from South-East Asia, you'll probably be struck by the lack of hype and commercial activity. If you arrive from Delhi or Kathmandu, you're sure to notice the relatively clean air. If you've flown from Calcutta you might find it clean and orderly and if you've come overland through rural Bangladesh, it will seem like Babylon. Here the lights are as bright as they get in Bangladesh, and there's a range of goods and services lacking elsewhere in the country.

The oldest section of the city runs along the north bank of the waterfront and was developed when Dhaka was a significant Moghul trading centre. A must-see in the Old City is the area between the two main water transport terminals, Sadarghat and Badam Tole where the panorama of river life on the Buriganga is particularly fascinating. This area is always crowded with people and watercraft of every type. Along the waterfront is the old baroque-style palace, Ahsan Manzil which has been painted bright pink.

Dhaka is located in the geographic center of the country. It is in the great deltaic region of the Ganges and Brahmaputra rivers. The city is within the monsoon climate zone, with an annual average temperature of 25 deg C (77 deg F) and monthly means varying between 18 deg C (64 deg F) in January and 29 deg C (84 deg F) in August. Nearly 80% of the annual average rainfall of 1,854 mm (73 in) occurs between May and September.

Dhaka is in one of the world's leading rice- and jute-growing regions. Its industries include textiles (jute, muslin, cotton) and food processing, especially rice milling. A variety of other consumer goods are also manufactured here. The Muslim influence is reflected in the more than 700 mosques and historic buildings found throughout the city. The University of Dhaka (1921) and several technical schools and museums are located here.

GENERAL INFORMATION

Area : 815.85 Sq. kilometres (approx.)
Population : Seven million (approx.)
Climate : Tropical, with heavy rainfall and bright sunshine in the monsoon and warm for the greater part of the year. The winter months, from November to March, are however, most likeable, cool and pleasant.

Temperature: Max. Min.
Summer : 36.7°C 21.1°c
Winter : 31.7°C 10.5°c

Rainfall : 2540 mm annually.
Humidity : 80 percent (approx.)

ATTRACTION OF DHAKA

Mosques : Dhaka has several hundred mosques. Prominent are Baitull Mukarram-National Mosque, the seven Domed Mosque (17th century), Star Mosque (18th century) , Chawkbazar Mosque and Huseni Dalan Mosque.

Hindu Temples : Dhakeshwari Temple (11th Century), Ramkrishna Mission.

Churches : Armenian Church (1781 A.D.) St. Mary's Cathedral at Ramna, Church of Bangladesh or former Holy Rosary Church (1677A.D.) at Tejgaon.

National Memorial : It locates at Savar, 35, km. from Dhaka city. The memorial designed by architect Moinul Hossain is dedicated to the sacred memory of the millions of unknown martyrs of the war of liberation.

Lalbagh Fort : It was built in 1678 A.D. by Prince Mohammad Azam, son of Mughal emperor Aurangazeb. The fort was the scene of bloody battle during the first war of independence (1857) when 260 sepoys stationed here backed by the people revolted against British forces. Outstanding among the monuments of the Lalbagh are the tomb of Pari Bibi , Lalbagh Mosque, Audience Hall and Hammam of Nawab Shaista Khan now housing a museum.

The capital city Dhaka predominantly was a city of the Mughals. In hundred years of their vigorous rule successive Governors and princely Viceroys who ruled the province, adorned it with many noble monuments in the shape of magnificent places, mosques, tombs, fortifications and 'Katras' often surrounded with beautifully laid out gardens and pavilions. Among these, few have survived the ravages of time, aggressive tropical climate of the land and vandal hands of man.

But the finest specimen of this period is the Aurangabad Fort, commonly known as Lalbagh Fort, which, indeed represents the unfulfilled dream of a Mughal Prince. It occupies the south western part of the old city, overlooking the Buriganga on whose northern bank it stands as a silent sentinel of the old city. Rectangular in plan, it encloses an area of 1082' by 800' and in addition to its graceful lofty gateways on south-east and north-east corners and a subsidiary small unpretentious gateway on north, it also contians within its fortified perimeter a number of splendid monuments, surrounded by attractive garden. These are, a small 3-domed mosque, the mausoleum of Bibi Pari the reputed daughter of Nawab Shaista Khan and the Hammam and Audience Hall of the Governor. The main purpose of this fort, was to provide a defensive enclosure of the palacial edifices of the interior and as such was a type of palace-fortress rather than a seige fort.


1857 Memorial : ( Bahadur Shah Park) Built to commemorate the martyrs of the first liberation war (1857-59) against British rule. It was here that the revolting sepoys and their civil compatriots were publicly hanged.

Bangabandhu Memorial Museum : The residence of the father of the nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman at Dhanmondi has been turned into a musuam. It contains rare collection of personal effects and photographs of his lifetime.

Mukti Juddha Museum : Situated at Segun Bagicha area of the city the museum contains rare photographs of Liberation war and items used by the freedom fighters during the period.

Ahsan Manzil Museum : On the bank of the river Buriganga in Dhaka the pink majestic Ahsan Manzil has been renovated and turned into a museum recently. It is an example of the nations rich cultural heritage. It was the home of the Nawab of Dhaka and a silent spectator to many events. The renovated Ahsan Manzil is a monument of immense historical beauty. It has 31 rooms with a huge dome atop which can be seen from miles around. It now has 23 galleries displaying portraits, furniture and household articles and utensils used by the Nawab.

Curzon Hall : Beautiful architectural building named after Lord Curzon. It now houses the Science Faculty of Dhaka University.

Old High Court Building : Originally built as the residence of the British Governor, it illustrates a happy blend of European and Mughal architecture.

Dhaka Zoo : Popularly known as Mirpur Zoo. Colorful and attractive collections of different local and foreign species of animals and birds including the majestic Royal Bengal Tiger are available here.

National Museum : Located at the central point of the city, the museum contains a large number of interesting collections including sculptures and paintings of the Hindu, Buddhist and Muslim periods.

Botanical Garden : Built on an area of 205 acres of land at Mirpur and adjacent to Dhaka Zoo. One can have a look at the zoo and the botanical garden in one trip.

National Park : Situated at Rejendrapur, 40 km. north of Dhaka city , this is a vast (1,600 acres) national recreational forest with facilities for picnic and rowing etc.

Central Shahid Minar : Symbol of Bengali nationalism. This monument was built to commemorate the martyrs of the historic Language movement of 1952. Hundreds and thousands of people with floral wreaths and bouquet gather on 21 February every year to pay respect in a solemn atmosphere. Celebrations begin at zero hour of midnight.

National Poet's Graveyard : Revolutionary poet Kazi Nazrul Islam died on the 29 August 1976 and was buried here. The graveyard is adjacent to the Dhaka University Mosque.

Suhrawardy Uddyan (Garden) : A Popular Park. The oath of independence of Bangladesh was taken here and Father of the Nation Bangabandhu Sheik Mujibur Rahman gave clarion call for independence on this occasion on the 7th March 1971. The place is famous for its lush verdure and gentle breezes. Eternal Flame to enliven the memory of the martyrs of our Liberation war has been blown here recently.

Mausoleum of National Leaders : Located at the southwestern corner of Suhrawardy Uddyan, it is the eternal resting place of great national leaders, Sher-e-Bangla A.K. Fazlul Haque, Hossain Shahid Suhrawardy and Khaja Nazimuddin.

Banga Bhaban : The official residence of the President, located in the city . One can have an outside view of this grand palace.

Baldha Garden : Unique creation of the late Narendra Narayan Roy, the landlord of Baldha. Year of establishment was 1904. Located in Wari area of Dhaka city, the garden with its rich collection of indigenous and exotic plants is one of the most exciting attraction for naturalists and tourists.

Ramna Green : A vast stretch of green garden surrounded by a serpentine lake near the Sheraton Hotel.

Parliament House : Jatiya Sangsad Bhaban (Parliament House) located at Sher-e-Bangla Nagar has distinctive architectural features. Designed by the famous architect Louis I. Kahn, it may be called an architectural wonder of this region.

Science Museum : The museum is a modern learning center related to the latest scientific discoveries. It is situated at Agargaon.

Institute of Arts and Crafts : Situated in the picturesque surroundings of Shahbagh the Institute of Arts and Crafts has a representative collection of folk-art and paintings by artists of Bangladesh.

Sonargaon : About 29 km. from Dhaka. Sonargaon is one of the oldest capitals of Bangal. A Folk Arts and Crafts Museum has been established here.

Other attractions in and around Dhaka include the Institute of Arts and Crafts with its representative collection of folk art and paintings, handicraft shops. Aparajeya Bangla monument, picnic spots at Chandra and Salna, industrial estates of Tongi, Narayanganj, Demara, Tejgaon, cruising by country boat in the nearby river or a visit to a village to see jute cultivation, weaving and pottery making. Last but not the least travel by a horse driven cart or rickshaw along busy Dhaka streets is a rewarding experience.


About 27 km. from Dhaka, Sonargaon is one of the oldest capitals of Bengal. It was the seat of Deva Dynasty until the 13th century. From then onward till the advent of the Mughals, Sonargaon was subsidiary capital of the Sultanate of Bengal. Among the ancient monuments still intact are the Tomb of Sultan Ghiasuddin (1399-1409 A. D), the shrines of Panjpirs and Shah Abdul Alia and a beautiful mosque in Goaldi villaae.

Picnic Spots : There are good picnic spots in the area around Savar and Mirzapur. Other beauty spots connected by road with Dhaka include Joydevpur, Sripur, Madhupur, Rajendrapur National Park, Chandra and Salna, all of which have rest-houses that can be used by tourists on request to the Forest Department.
Bangaldesh Parjatan Corporation owns two picnic spots with Bunglows at Chandra and Salna which can also be hired by tourists.

Mosque of Baba Adam : Of a slightly later date the elegant 6-domed mosque (43'x36') of Baba Adam in Rampal near Dhaka was erected by one Malik Kafur during the reign of the last llyas Shahi Sultan, Jalauddin Fateh Shah in 1483 A.D. It displays the same characterstic features of the period such as the faceted octagonal turrets at 4 corners, the curved cornice, the facade and 3 mihrabs relieved richly with beautiful terracotta floral and hanging patterns.

Star Mosque : A very beautiful mosque of the city is situated at Mahuttuly on Abul Khairat Rd; just west of Armanitola Govt. High School. Architecturally faultless (Mughal style) is a five-dome mosque with hundreds of big and small twinkling stars as surface decorations. The stars have been created by setting pieces of chinaware on white cement. Seen from the front and from far it looks as if shining above the surface of the earth. The inside of it is even more beautiful that the outside, lovely mosaic floor and excellent tiles with many floral patterns set on the walls, are all in complete harmony. The sitara Masjid was built originally with three domes in early 18th century by Mirza Ghulam Pir, a highly respectable Zamindar of Dhaka. Frequently used in calendars. Entrance: through a lane named after the mosque.

Baitul Mukarram Mosque : Baitul Mukarram Mosque is situated at Purana Paltan east of Bangladesh Secretariat and north of Dhaka Stadium. Largest Mosque in the city, three storied and built after the pattern of the Kaba Sharif. Very beautiful and costly decorations in the interior. Long lawn, garden and rows of fountains to the south and east. The mosque is on a very high platform. Lovely flight of stairs lead to it; from the south, east and north. On the east is a vast varanda which is also used for prayer and Eid congregation. Below in the ground floor is a shopping centre.

Ahsan Manzil Museum : On the bank of river Buriganga in Dhaka the Pink majestic Ahsan Manzil has been renovated and turned into a museum recently. It is an epitome of the nation's rich cultural heritage. It is the home of Nawab of Dhaka and a silent spectator to many events.

Today's renovated Ahsan Manzil a monument of immense historical beauty. It has 31 rooms with a huge dome atop which can be seen from miles around. It now has 23 galleries in 31 rooms displaying of traits, furniture and household articles and utensils used by the Nawab.

Sightseeing Tours : Bangladesh Parjatan Corporation runs conducted sightseeing tours from its Tourist Information Centre at Dhaka Sheraton Hotel. The duration of the Dhaka City sightseeing tours is three hours approximately. Other tour operators……..

CLUBS :

Dhaka Club, Dhaka: formed in 1851 in the name of Ramna Dhaka Club. Accom, Rest. & Bar, Swimming Pool, Indoor Games, Tennis, Squash Ph: 880-2- 8619180-4, 505800-4

Golf Club, Kurmitola : Temporary Membership for tourists available, Golf, Rest. & Bar. Ph: 880-2-605301

Australian Club : Rd. 83, Gulshan, Membership to all Australians and New Zeaianders, Swimming, Tennis, Squash, Volleybal,
Ph:880-2- 603775

American Club : Gulshan, Membership open to all Americans and their families, Swimming, Tennis, Squash, Volleyball, Basketball, Rest,
Ph: 880-2-8821025-27

Swedish Club : Rd. 47, Gulshan, open to all Swedesh and their guests, Swimming, Squash, Tennis, Ph: 880-2-601043.

Netherlands, Recreation Cantre : Road 74, house 33, Gulshan 2, members must be Dutch, Swimming Tennis, Rest, Ph: 880-2-602039

Saturday, September 25, 2010

ঢাকা বিষয়ক চর্চা ও এশিয়াটিক সোসাইটি

ঢাকা বিষয়ক চর্চা ও এশিয়াটিক সোসাইটি

ঐতিহ্যবাহী মহানগরী ঢাকার ইতিহাস চর্চায় অগ্রণী ও ব্যাপক ভূমিকা পালন করে চলেছে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ। গবেষণা, স্মারক স্তম্ভ নির্মাণ, ঐতিহাসিক ভবনের সংস্কার, প্রদর্শনী, সেমিনার-সিম্পোজিয়ামের আয়োজন এই কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত। রাজধানী ঢাকার চারশ’ বছর পূর্তি উদযাপন উপলক্ষে চলছে বিপুল কর্মযজ্ঞ। রমনা এলাকার ৫ নম্বর পুরনো সেক্রেটারিয়েট রোডের (নিমতলী) এশিয়াটিক সোসাইটির কয়েকটি ভবনে নবীন-প্রবীণ গবেষক, শিক্ষক, সাহিত্য-সংস্কৃতি কর্মীরা এই কাজে ব্যাপৃত। এই প্রতিষ্ঠানটিতে যত কাজ হচ্ছে, তার প্রচার খুবই সীমিত। নিভৃত জ্ঞান চর্চা, ইতিহাস পুনরুদ্ধার, চলতি সময়ের প্রেক্ষাপটে ঐতিহ্যের নবরূপায়ণ ও উপস্থাপনার কাজটি অত্যন্ত দুরূহ। একই সঙ্গে অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ, ব্যয়বহুলও। বিশাল এই কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এশিয়াটিক সোসাইটির সভাপতি, প্রবীণ ইতিহাসবেত্তা অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম। ঢাকা বিষয়ক চর্চা, এর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে তার সঙ্গে আলাপ করেছেন আমার দেশ প্রতিনিধি হাসান হাফিজ। অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে আলাপচারিতার বিবরণ—

ঢাকার বিকাশ, বিবর্তন সম্পর্কে ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঢাকা মহানগরী চারশ’ বছরের পুরনো। এর ঐতিহ্য অনেক। এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যও বহুমুখী। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা দেখি, ৫০-৬০ বছর পরপর এই শহরের নানা বিষয়ে পরিবর্তন ঘটেছে। রূপবদলের প্রক্রিয়ার বিবর্তনে আমরা আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছি। ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা প্রথম রাজধানী হলো। সেটা ছিল সুবেদার আমল। একশ’ বছর চলল তাতে। তারপর এলো নবাবী শাসনকাল। সুবেদারি শাসন আমলে বাংলার রাজধানী হিসেবে যে ঢাকা গড়ে উঠেছিল, তা ছিল সামরিক শহর। মোগলদের ছিল হাজার হাজার হাতি, ঘোড়া। এগুলোর লালনপালন, দেখাশোনার জন্য অনেক লোকজন লাগত। সেই শ্রেণীর লোকজন ছাড়া এই শহরে অন্য কেউ বাসিন্দা ছিল না তত্কালে। সামরিক লোকজনও যারা ছিলেন তাদের সবাই বহিরাগত। সে সময়কার ভাষা ছিল ফার্সি। শহরকেন্দ্রিক যে বিকশিত হলো, তাও ছিল ফার্সিভাষাকেন্দ্রিক। খাঁটি মুসলমানী আমল ছিল ওই সময়টা। আনন্দ-উত্সবগুলোও উদযাপিত হতো উত্তর ভারতীয় সংস্কৃতির আদলে।
তারপর রাজধানী স্থানান্তরিত হয়ে চলে গেল মুর্শিদাবাদে। ওটা নবাবী আমলের শুরু। রাজধানী হিসেবে ঢাকা পরিত্যক্ত হয়ে গেল। মুর্শিদ কুলী খাঁর আমলের কথা বলছি। অষ্টাদশ শতকে ঢাকা পরিণত হলো ক্ষয়িষ্ণু এক মহানগরীতে। শাসন কার্যের অন্যতম অনুষঙ্গ হাতি-ঘোড়া—এসবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকজনও চলে গেল মুর্শিদাবাদে। কেউ কেউ বলেন, তখন ঢাকার জনসংখ্যা ৮-৯ লাখ কমে গিয়ে এক লাখে দাঁড়াল। নবাবদের শাসনামলে ভাষাগত পরিবর্তনও ঘটল। ফার্সির বদলে চর্চিত হতে থাকল উর্দু। মুসলমানী সংস্কৃতি, আচার-আচরণ, বেশভূষা রয়ে গেল আগেকার মতোই। এর মধ্যে যোগ হলো নতুন একটি মাত্রা, ইউরোপীয় বণিকদের আগমনের ঘটনা সেটি। আস্তে আস্তে বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে ঢাকার উত্থান ঘটতে লাগল। এই উত্থানের সূচনা পর্বটি হচ্ছে ১৯ শতকের দ্বিতীয় দশক থেকে। ঢাকায় সমাবেশ ঘটতে লাগল পর্তুগিজ, ফরাসি, আর্মেনীয়, ওলন্দাজ, উত্তর ভারতীয় লোকজনের। প্রায় নিস্তরঙ্গ একটা শহরে আন্তর্জাতিকতার ঢেউ এসে আছড়ে পড়ল সেই সময়টায়। তত্কালে ভাষা হয়ে গেল ইংরেজি, উর্দু থেকে। অর্থাত্ শাসকশ্রেণীর ভাষা হলো ইংরেজি। আর, তলানিতে তো স্থানীয় ভাষা ছিলই। শুধু ঢাকাই নয়, এ অঞ্চলের বহু জায়গায় নির্মিত হলো নীলকুঠি, বাণিজ্য কুঠি। নতুন একটি ধারার প্রবর্তন ঘটল। উদ্ভব হলো নতুন একটি শ্রেণীর। নিম্নবিত্তের শ্রেণী।
বাঙালির আধিপত্যের বিস্তার শুরু হয় উনিশ শতকের গোড়ার দিকে। বাংলা ভাষা তার জাতীয় রূপ নিয়ে উদ্ভাসিত হতে শুরু করল। ফার্সির রেশ রয়ে গেছে তখনও। উর্দু, হিন্দিও রয়েছে পাশাপাশি। মাল্টিপল কালচারের আস্বাদ মিলত লাগল তত্কালীন ঢাকা শহরে। মোগলরা যখন শাসন করত, তখন বাঙালিরা ছিল অন্ত্যজ শ্রেণীর। ক্রমে ক্রমে বাড়ছিল জনসংখ্যা। যেন এর সঙ্গে পাল্লা দিয়েই কমে আসছিল মুসলমানের সংখ্যা। কারণ মুসলিম সমপ্রদায়ের লোকজন চলে যাচ্ছিলেন মুর্শিদাবাদ, কলকাতা, লক্ষেষ্টৗ ইত্যাদি অঞ্চলে। আগে ঢাকা শহরে মুসলমানরা ছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠ। সেটা আর থাকল না। হিন্দুরা এলেন কেরানি হয়ে, সাপ্লায়ার হয়ে। ক্রমে ঢাকা পরিণত হলো হিন্দুপ্রধান শহরে। উনিশ শতকের শেষ দিকে হিন্দুরা হয়ে গেল সংখ্যাগরিষ্ঠ সমপ্রদায়। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত বিভক্ত হয়, তখন ঢাকায় হিন্দুরা ছিল মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ।
এতকাল মুসলমানরা হিন্দুদের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করে চলছিল। হিন্দু মুসলমানের মধ্যে ভালো সমপ্রীতি, সখ্য, ঐক্য সবই ছিল। ছেচল্লিশের দাঙ্গার পর এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে বড় ধরনের টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়। ঘটে পরিবর্তন। এটা এক ঐতিহাসিক পালাবদল। ’৪৭ সালের দেশভাগের পর হিন্দুদের এক শ’ জনের মধ্যে নব্বই জনই চলে গেলেন ভারতে। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের আদমশুমারিতে দেখা যায়, হিন্দুর সংখ্যা এক-তৃতীয়াংশেরও কম।
তারপর বিহারিরা এল এই শহরে। সংস্কৃতির বেহাল অবস্থা। খাদ্যদ্রব্য, ভাষাগত, শিক্ষাগত সমস্যা সঙ্কট দেখা দিল। হিন্দু শিক্ষকরা চলে গেলেন দেশ ছেড়ে। সঙ্কট তৈরি হলো। আমরা দেখতে পাচ্ছি, ঢাকা মহানগরীর দৃশ্য বদল ঘটেছে বারবার। সংস্কৃতি কোনোমতেই স্থিতিশীল থাকতে পারছে না। বিশ্বের অন্য কোনো শহরের ক্ষেত্রে এরকমটি ঘটেনি। এমন বিবর্তনের চিত্র আমরা কোথাও পাইনি। এসব বিষয় নিয়ে গবেষণা হয়নি।
কেন গবেষণা হলো না বা হচ্ছে না? জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এ অঞ্চলের মুসলমানরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চায় পিছিয়ে ছিলেন। পাণ্ডিত্যপূর্ণ স্বভাব, মানসিকতা হঠাত্ করেই তৈরি হয় না। এ জন্য প্রজন্মের পর প্রজন্ম সময় লাগে। ওই যে বলছিলাম, দেশভাগের পর বুদ্ধিবৃত্তিক একটা শূন্যতা সৃষ্টি হলো। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মান রাতারাতি হাই স্কুলের পর্যায়ে নেমে গলে। শূন্যস্থান পূরণ করা হলো যাদের দিয়ে, তারা এর আগে শিক্ষকতা পেশায় ছিলেন না বেশির ভাগই।
মেধা মনীষার লালন, বিকাশের জন্য দরকার স্থিতিশীলতা। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ফলে এতকাল ধরে চলে আসা গতিটা ব্যাহত হলো। মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশে আরও অনুকূল পরিবেশ, পাওয়া, উত্কর্ষ অর্জনের স্বপ্ন ছিল আমাদের। কিন্তু সেটা আর পাওয়া হয়ে উঠল না। গবেষণার ক্ষেত্রে যে উত্কর্ষ ও ব্যাপ্তির প্রত্যাশা ছিল, তা পূরণ হয়নি। গবেষণার ভুবনে ঈপ্সিত সাফল্য আমরা অর্জন করতে পারলাম না এখনও পর্যন্ত। সেই একটা শূন্যতা রয়েই গেছে। আপনারা জেনে আনন্দিত হবেন যে, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ এই শূন্যতা পূরণ করতে সর্বশক্তি দিয়ে এগিয়ে এসেছে। তিন বছরব্যাপী একটা প্রকল্পের কাজ চলছে এখন। এই প্রকল্পের পুরো অংশই ঢাকা সংক্রান্ত গবেষণার জন্য। এর আওতায় মোট ১৯টি বই প্রকাশ করা হবে। এর মধ্যে ১০-১২টি লেখা হয়ে গেছে এরই মধ্যে, বাকিগুলো প্রণয়নের কাজ চলছে। ঢাকার ঐতিহ্য, খাবার-দাবার, ভাষা, ফোকলোর, ইতিহাসসংক্রান্ত বই পুনর্মুদ্রণও এই প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত। ঢাকা সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সেমিনার এরই মধ্যে একটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরও একটি শিগগিরই আয়োজন করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিষয়ক গবেষণা কেন পর্যাপ্তসংখ্যক হলো না? এর কারণ কী? জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম বলেন, নানা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ অক্ষুণ্ন থাকেনি। যারা যোগ্য পণ্ডিত, তাদের অনেকেই দেশে থাকেন না। থাকতে চান না। থাকবার অনুকূল পরিবেশেরও অভাব রয়েছে। গবেষণায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যথেষ্ট ভালো করবার সুযোগ ছিল। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে সুযোগ নষ্ট করে দিয়েছে। বাণিজ্যিকীকরণ করা হয়েছে শিক্ষাকে। সরকারের উচিত ছিল এই অরাজকতা, অবক্ষয় কঠোর হাতে দমন করা। এই দেখুন না আমাদের বাংলাপিডিয়া প্রকল্পে ১০ জন সিনিয়র প্রফেসর আগে সম্পাদনার দায়িত্বে ছিলেন। তাদের ধরে রাখতে পারিনি। উপযুক্ত সম্মানী দিতে পারছি না আমরা। এখন আগের চেয়ে তিন গুণ বেশি টাকা দিয়েও লোক পাচ্ছি না। বাংলাপিডিয়ার দ্বিতীয় সংস্করণের কাজ চলছে এখন। তরুণদের মধ্যে উত্সাহী গবেষক আমরা খুঁজে খুঁজে বার করছি। আমাদের প্রয়াসে ইতিবাচক ফল পাওয়া যাচ্ছে। আমি সে কারণে হতাশ নই। তরুণদের মধ্যেও জ্ঞানচর্চার আগ্রহ ও কৌতূহল লক্ষ্য করছি। আমি আশাবাদী।

Friday, September 24, 2010

প্রিয় এই ঢাকা শহর

প্রিয় এই ঢাকা শহর

র বি উ ল হু সা ই ন
স্থাপত্য শিল্পের প্রধান গুণ হচ্ছে পরিবেশকে সুন্দর আর ব্যবহারযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যমূলক প্রয়াস নির্ধারণ। এজন্য একজন স্থপতি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেন। যেখানে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় নির্মিতব্য একটি বা বহু ভবন যে উদ্দেশ্যে সৃষ্ট হচ্ছে তা যেন সফল এবং সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়, ভেতরে এবং বাইরে, সেই রকমভাবে বিশেষজ্ঞ হিসেবে সেবাদান করাই তার লক্ষ্য। সঙ্গে সঙ্গে আশপাশের পরিবেশকে আরও উন্নত করাও তার অন্যতম প্রধান কর্তব্য। তার কাজের মধ্য দিয়ে বিদ্যমান পরিবেশকে গুণগত পরিবর্তন করার বিশেষ ক্ষমতা প্রকাশ পায়। এই তুলনায় পরিকল্পনাবিদদের কাজ আরও ব্যাপক; যেহেতু তারা জনপদে নগরায়ন সৃষ্টিতে মহাপরিকল্পনা করেন। যে কোনো পরিকল্পনায় স্থপতি, পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলী প্রমুখের পৃথক ও নির্দিষ্ট ভূমিকা থাকে এবং সেই সঙ্গে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গেরও। ওই পরিকল্পিত ভবন, শহর, শহরতলি বা জনপদ সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী গড়ে উঠছে কিনা, সেটি তত্ত্বাবধান ও নিয়ন্ত্রণ করার লক্ষ্যে সরকার এবং সুশীল নাগরিকদের অংশগ্রহণ করা একান্তভাবেই প্রয়োজন। উন্নত দেশে কাঠামোয় এই ব্যবস্থা যৌথায়ন অর্থাত্ ব্যক্তি ও সরকার, সমভিব্যহারে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি সংস্কার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আমাদের ঢাকা শহর রক্তের উচ্চচাপ ব্যাধিগ্রস্ত একজন অসহায় রোগীর করুণ অবস্থায় যে দশা হয়, তার মধ্যে পতিত হয়েছে। সেই প্রায় চারশ’ বছরের পুরনো জনপদ আজ অপরিকল্পিতভাবে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মতো ক্রমাগত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হচ্ছে তো হচ্ছেই।
এই ব্রহ্মাণ্ডজগত দু’টি দিক দিয়ে বিবেচনায় ঢাকা শহরের বিষয়ে আসন পার্থক্য নির্দেশ করে। এক. ব্রহ্মাণ্ডজগত্ অদৃশ্য এক কঠোর নিয়ম ও শৃঙ্খলার মধ্যে ক্রমাগত বিন্যাসিত হচ্ছে গ্রহ-তারা নিয়ে; দুই. বিপুল বিশাল শূন্যতার মধ্যে সেই প্রসারণের জন্য কোনো পরিসরের অভাব নেই, কখনও হবেও না। সেই তুলনায় ঢাকা শহরের ক্রমান্তর বিকল্প কোনো শৃঙ্খলা ও নিয়মহীন এবং এর জায়গারও খুব অভাব। প্রবল জনসংখ্যার চাপ এবং প্রতিটি বিষয়ে অনিয়মই একটি নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগর পরিকল্পনা যেভাবে হয়েছিল যেখানে এক একটি অঞ্চল নিয়ে এক একটি পৃথক ব্যবহারিক কর্মকাণ্ড যেমন আবাসিক, বাণিজ্যিক, বিনোদন, সবুজ উন্মুক্ত প্রান্তর, জলাভূমি, রাস্তাঘাট, নদী, খাল ইত্যাদির সম্মিলিত সন্নিবেশিত রূপ এখন একটির সঙ্গে অন্যটি মিলে-মিশে জগাখিচুড়ি পর্যায়ের অবস্থানে উপনীত হয়েছে। তাদের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও পরিচয় লোপ পেয়েছে বহমান অনিয়ন্ত্রিত কার্যকলাপের দরুন। রাস্তায় নামলে যানজট, একই রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের বিভিন্ন গতি, এর ওপর নিরাপত্তহীনতা, সন্ত্রাস আর ছিনতাইকারীদের অত্যাচার ও অপমান। কোনো কোনো অঞ্চলে একই সঙ্গে আবাসিক-প্রাতিষ্ঠানিক; অর্থাত্ স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল, হোটেল, দোকানপাট একই লাইনে বিরাজ করছে। উন্মুক্ত সবুজ মাঠ বা জলাভূমি এই শহর থেকে প্রায় উধাও। যে খাল-বিল ছিল সব ভরাট করে বহুতলবিশিষ্ট বাণিজ্যিক আর আবাসিক ভবন তৈরি হচ্ছে এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তপক্ষ প্রদত্ত নির্দিষ্ট আইন মান্য করার কোনো সদিচ্ছা নেই। যে যার মতো করে চলেছে। কর্তৃপক্ষের প্রচ্ছন্ন দুর্নীতির মাধমে এসব বাস্তবায়িত হয় এবং এখনও হয়ে আসছে।
প্রকৃতপক্ষে সামগ্রিক ও রাজনৈতিক অবস্থার প্রত্যক্ষ প্রভাব যেন ঢাকা শহরকে আরও মর্মান্তিক শহরে পর্যবসিত করে তুলেছে। আইন যে নেই তা নয়, প্রতিটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ও সুচারুভাবে আইন প্রণীত হয়েছে, যদিও তা ছিল ব্রিটিশ আমলের উপযোগী। কিন্তু আইন তখনই আইন যখন তা মান্য করা হয়। আমাদের দেশে আইন মান্য করার মানসিকতা দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে, ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। এক ধরনের মাত্স্যন্যায় অবস্থার মধ্যে সবাই দিনাতিপাত করছে। রাজউকের সঠিক নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা শহরে নির্মিতব্য প্রতিটি দালান-কোঠার নকশা করা হয় এবং সেইমত জমা দিয়ে নির্মাণ করার অনুমতি ও অনুমোদন পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে নির্মাণ করার সময় মালিক নিজেই নিজের জমি চুরি করে নিয়মভঙ্গ করেন এবং চারদিকে প্রায় সীমানা পর্যন্ত ভবনটিকে প্রসারিত করেন। এই অনিয়ম-পদ্ধতি প্রায় সব মালিক অনুসরণ করে নিজেদের সুস্পষ্টভাবে অপরাধী হিসেবে সৃষ্টি করছেন এবং এতে বাধা দেয়ার কেউ নেই। সরকার বা সুশীল সমাজে এমন কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি যার ফলে তারা বলবেন যে, ভাই এভাবে এটি সম্পাদন করা ঠিক হয়নি। এসব অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করার কোনো কার্যকৌশল কোথাও দেখা যায় না। সাধারণত সামনের রাস্তা বিশ ফুট চওড়া হলে সীমানা থেকে পাঁচ ফুট ছেড়ে ভবন তৈরি করতে হয়। তখন ভবনের উচ্চতা হবে পঞ্চাশ ফুট অর্থাত্ পাঁচতলা। এখন দেখা যায়, অনেকেই এই আইন মানেন না। তারা একেবারে জমির সীমানা পর্যন্ত বারান্দসহ ভবন নিয়ে আসেন। স্পষ্ট বোঝা যায় যে, এটা নিয়ম ভঙ্গ করে তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোনো ধরনের প্রতিবাদ, বাধা, আপত্তি, কেউ করে না এবং করার কেউ নেই। আর যদি করা হয়, তাহলে দেশের বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তার বিপদে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকে। তাই সরকার বা পাবলিক কোনো দিক থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। যেন সেই নাগরিকবোধটিই লোপ পেয়েছে আমাদের মাঝ থেকে। সাধারণত সামনের রাস্তা পঞ্চাশ ফুট চওড়া হলে ভবনের উচ্চতা একশ’ দশ ফুট, অর্থাত্ এগারোতলা করা যায়। কিন্তু ঢাকা শহরের অলিগলিতে অবস্থিত পনের-বিশ ফুট চওড়া রাস্তার পাশেই বহুতল দশ-বারো তলা উচ্চতাবিশিষ্ট ভবন গড়ে উঠছে। শোনা যায়, রাজউকের একশ্রেণীর দুর্নীতিপরায়ণ কর্মীর সাহায্যে এসব দিনকে রাত এবং রাতকে দিন করার কর্মযজ্ঞ কাগজে-কলমে ঠিক করা হয়। তারা সামনের বিশ ফুট চওড়া রাস্তা নকশায় পঞ্চাশ ফুট দেখিয়ে আইনগত নীতিমালা অতিক্রম করে। অনেক সময় সংশ্লিষ্ট স্থপতি এই ষড়যন্ত্রের কথা কিছু জানতে পারেন না। এখন মূল পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা যা তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে যদি এমন অনিয়ম এবং দুর্নীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে তাহলে সেখানে আর কোনো আশা থাকে না। আশার কথা, এখন উপরিউক্ত নিয়ম আর অনুসৃত হচ্ছে না, তার দলে ঋঅজ পদ্ধতি এই ২০০৮ সালে চালু হয়েছে অর্থাত্ ফ্লোর-ঋষড়ড়ত্ অত্বধ জধঃরড় একটি প্লটে নির্ধারিত নিয়মানুযায়ী ভবন উঁচু করা যাবে, তবে সেই অনুপাতে চারদিকে জায়গা ছেড়ে দিতে হবে এবং স্থপতি-প্রকৌশলী-মালিক সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। এর অন্যথা হলে শাস্তি পেতে হবে। নিয়মে হয়তো কাজ হবে এই আশা করা যায়।
ঢাকা শহর দ্রুতগতিতে বিশ্বের অন্যতম জনবহুল শহরে পরিণত হতে যাচ্ছে। কিন্তু লক্ষণীয় যে, শুধু জনসংখ্যা দিয়েই শহরের বিরাটত্ব বা বিশালত্ব দাবি করার মানসিকতা সৃষ্টি হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত শহরে জনসংখ্যার সঙ্গে সঙ্গে সেবা অর্থাত্ যোগাযোগের রাস্তা ও বাণিজ্যিক-আবাসিক সুযোগ-সুবিধা, কর্মসংস্থান, বিনোদন, খোলা জায়গা, জলাভূমিসহ বিদ্যুত্, গ্যাস, জলের সুচারু আর অবাধ সরবরাহের সুচিন্তিত ব্যবস্থা সুনিশ্চিত করে বসবাসোপযোগী করে তোলা হয়। সেই তুলনায় ঢাকা শহরে করা হয় না কখনও; অথচ হু হু করে দালানকোঠার সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। জল, বিদ্যুত্, গ্যাসসহ রাস্তাঘাটের সুবিধা যা আছে, তাই। এর কোনো পরিবর্তন নেই। অতএব আমাদের এই প্রিয় ঢাকা শহর দৈব-দুর্বিপাকের শহর হিসেবে দিন দিন পরিণত হচ্ছে। ভবিষ্যতে এই অবস্থা রোধ, নিরসন এবং সুচিন্তিভাবে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে এ শহরের পরিণতি খুবই খারাপ হবে—একথা হলফ করে বলা যায়। আর এর মধ্যে যদি শতাব্দীর ধাক্কা নামক আসন্ন ভূমিকম্প এখানে মারাত্মকভাবে আঘাত করে, তাহলে কী যে হবে সে কথা ভাবলেই শিউরে উঠতে হয়।
ঢাকা শহরের মূল আকর্ষণ ছিল নদী, পুকুর, খাল ও জলাশয়। আমাদের শহরে পাহাড় নেই। এছাড়া যে কোনো শহর মূল তিনটি অপরিহার্য বস্তু বা উপাদান নিয়ে গঠিত হয়। মাটি, বৃক্ষরাজি এবং জলাশয়। প্রকৃতি ও নিসর্গের মূল আকর্ষণীয় বিষয়বস্তুই এই ত্রি-গুণ বস্তুর সমন্বিত বিন্যাস। নগর পরিকল্পনায় তাই সব সময় যতদূর সম্ভব এই তিনটি প্রকৃতির দানকে অক্ষুণ্ন রেখে চিন্তা-ভাবনা করা হয়। ঢাকা শহরকে প্রকৃতি যেভাবে গড়তে চেয়েছিল, মানুষের উচিত ছিল তাকে অনুসরণ করা। কিন্তু তা না করে আমরা বর্বর, অশিক্ষিত প্রাণধারণকারী মনুষ্যপদবাচ্য প্রাণী ইচ্ছেমত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য সেই সুবিন্যাসকে অবিন্যাসিত করে ভাবীকালের ভাবী প্রজন্মের কাছে অপরাধী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছি। ঢাকা শহরে যে প্রাকৃতিক খাল-বিল ছিল, তা ভরাট করে শহর সম্প্রসারণ করেছি। ঢাকা শহরের যে বন্যা-পরবর্তী নাব্যতা ছিল, তার ভারসাম্য নষ্ট করেছি। ঢাকা শহরের যে অপরূপ সৌন্দর্য ছিল তাকে আমরা হত্যা করেছি। ঢাকা শহর বা যে কোনো শহরে যে হারে উন্মুক্ত সবুজ প্রান্তর থাকার কথা ছিল, তা পূর্ণ না করে আমরা তাত্ক্ষণিক লাভজনক কর্মক্রিয়ার পৃষ্ঠপোষকতায় নেমে গেছি। বর্তমানে তাত্ক্ষণিক স্বার্থ হাসিল যে ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী ক্ষতিকারক হয়ে পড়ছে—সে কথা আমরা ঘুণাক্ষরেও চিন্তার মধ্যে আনছি না। এজন্য আমরা অসভ্যভাবে বুড়িগঙ্গার বুকেও হাত দিচ্ছি। এটাকে ড্রেজিং করে এর নাব্যতা, গভীরতা ও জল দূষণ মুক্তি এবং নিরসনের ব্যবস্থা এখনই করা দরকার। তা না করে উল্টো এর জলাভূমি ভরাট করে নদী চুরির মতো জঘন্য কাজ করে পরিবেশ হত্যাকারী হিসেবে পরিচিত হচ্ছি। বিদ্যমান ক্ষমতাসীন গণতান্ত্রিক সরকারের সমালোচনা করা যদি এক ধরনের রাষ্ট্রীয় অপরাধ হয়, তাহলে তার চেয়েও বড় অপরাধ এই সামগ্রিক পরিবেশ দূষণক্রিয়া এবং সরকার যদি এই অপরাধকে কঠোরভাবে দমন না করে তাহলে কালের বিচারে এরাও অপরাধী।
ঢাকা শহরকে ঘিরে যে ৪৮টি খাল ও ৬টি নদী বিদ্যমান ছিল, এদের কোনোটার কিছু আছে, কোনোটার কিছু নেই। সেগুলো পুনর্খনন করে নাব্য করা দরকার। ঢাকা শহরে ইদানীং বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পাশাপাশি বহুতল আবাসিক ভবন নির্মিত হচ্ছে। আবাসিক ভবনের ভীষণ চাহিদা পূরণের বিষয়ে সেগুলো বলা যায় যথেষ্ট অবদান রাখছে। কিন্তু তা অন্যদিক দিয়ে মানুষের চিন্তা-চেতনায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে থাকে। এ কারণে উন্নত দেশে বহুতল দালানে বসবাস করা মানুষজন পরিত্যাগ করতে শুরু করেছে। হয়তো নববিবাহিত দম্পতিদের কিছুকালের জন্য অথবা অতিথি ভবন হিসেবে ব্যবহার করার জন্য এগুলো আদর্শ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সবাই চায় মাটির কাছাকাছি খোলা জায়গায় আলো-হাওয়ায় জীবন কাটাতে। বিশেষ করে মা-বাবার সন্তান পালনে বহুতল দালান খুবই অনুপযোগী; যেখানে শিশুদের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফার্মের মুরগির মতো তাদের জীবন-মনের অবচেতনায় কৃত্রিম আবহাওয়ায় অমানবিক-অস্বাভাবিক অবস্থার সৃষ্টি করে। মনস্তাত্ত্বিকভাবে ওইসব শিশু প্রকৃতির স্বাভাবিক প্রযত্ন এবং প্রভাবে মানুষ না হতে পেরে অন্যভাবে বিকশিত হয়। তারা একাকিত্ব ও বিরূপ পরিবেশে মন-মানসিকতায় অস্বাভাবিক আচরণে জীবনবিমুখ হয়ে পড়ে। বহুতল দালানের কক্ষাবাসে বাস করে তাদের সবকিছুই বর্গ, আয়ত বা বৃত্তে বন্দি হয়ে যায়। এ সম্বন্ধে কবি জেরাল্ড রাফটারি লিখেছেন—
A filing cabinet of human lives,
Where people swarm like bees in tunneled hives
Each to his own cell in the towered comb
Identical and cramped we call it home.
আবার আলফোসানিয়া স্টরনি আর এক কবিতায় বলেছেন—
Houses in a row, houses in a row,
Houses in a row
Squares, squares, sqaures
Houses in a row
People already have square souls,
Ideas in a row.
And angles on their backs
I myself shed a tear yesterday
Which was good heavens-square.
তবে ভালোভাবে বসবাস করার জন্য মহত্ শহরের উত্কর্ষে মহান মানুষজনের দরকার। সেই শহরই সুন্দর যে শহরে সুন্দর মনের মানুষ বাস করে।
কবি ওয়াল্ট হুইটম্যান তাই বলেছেন—
The greatest city is that which has the greatest men and women. If it be a few rugged hut, it is still the greatest city.
তাই সব কথার শেষ কথা, রবি ঠাকুরের গানের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বলা যায়, তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ (মানুষ) চাই।
ঢাকা শহরের বাসিন্দাদের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য এখানে কোনো উন্মুক্ত প্রান্তর খুঁজে পাওয়া যায় না। একটুখানি ফাঁকা পেলেই সেখানে নির্মিত হয় বড় বড় দালানকোঠা। জোনিং বা সুনির্দিষ্টভাবে একেকটি অঞ্চলের ব্যবহারিক সীমারেখা অন্তর্গত কর্মকাণ্ড ভীষণভাবে ব্যাহত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এবং বেসরকারি পর্যায়ে। যেমন রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যবহৃত স্থান, সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রীদের আবাসিক এলাকা, রাষ্ট্রপতির কার্যালয় এবং বাসভবন, সেনানিবাস ইত্যাদি সব মূল শহরের মধ্যে বিচ্ছিন্নভাবে বিরাজ করছে। ফলে ওইসব রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তা, মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, রাষ্ট্রপতির একই রাস্তা দিয়ে বিশেষ প্রতিরক্ষায় চলাফেরা জনগণের জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত এক যান-জমাটের সম্মুখীন করে তোলে এবং এতে সাধারণ মানুষের প্রভূত ক্ষতি হয়। তাই জোহানেসবার্গের মতো রাজধানী দু’ভাবে পৃথক করে একটি বাণিজ্যিক আর একটি প্রশাসনিক কার্যপ্রণালী পরিচালন করার জন্য বিশেষায়িত করা এখনই প্রয়োজন। নদী, বন-জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র সৈকত, উন্মুক্ত প্রান্তর, হ্রদ, খাল-বিল—যা এই দেশের প্রকৃতির অপরিহার্য অংশ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকরখনি ও পরিবেশ সহায়তাকারী একমাত্র উপাদান, সেগুলোকে মানুষের থাবা থেকে চিরকালের জন্য রক্ষা করার অভিপ্রায়ে জাতীয় সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণা করা এখনই প্রয়োজন। এসবের বিরুদ্ধে কেউ কোনো আচরণ করলে তা বড় একটি দেশনাশকতামূলক অপরাধ হিসেবে ধরা হবে।
ঢাকা শহরের ওপর অপ্রতিরোধ্য যাবতীয় বিষয়ের চাপ কমানোর জন্য অচিরেই বিকেন্দ্রীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা এখনই প্রয়োজন। দরকার হলে দেশকে চার-পাঁচটি বিভাগে ভাগ করে তার অধীনে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসন, বিচার ও বাণিজ্য-কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ করার দরকার হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ আইন-শৃঙ্খলার উন্নতির জন্য ঢাকা শহরকে মেট্রোপলিটন শহর ঘোষণা দিয়ে পুলিশ, বিদ্যুত্, জল, গ্যাস, পয়ঃপ্রণালী, আবর্জনা সম্পসারণ সব জনপ্রতিনিধিদের হাতে ন্যস্ত করার এখনই প্রয়োজন। ঢাকা শহরের বিপুল আবর্জনারাশিকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে অন্যান্য শহরের মতো উপজাত সার, বিশুদ্ধ জল বা নির্মাণ সামগ্রী উপকরণ প্রস্তুত করার শিল্পায়ন ব্যবস্থা একান্তভাবে বাস্তবায়িত করা এখনই প্রয়োজন। পুলিশ বিভাগকে পুনর্বিন্যাসিত করে এদের প্রতিটি জেলা-উপজেলা শহরের জনপ্রতিনিধির অধীনে ন্যস্ত করার দরকার, যারা কম্যুনিটি পুলিশ বা জনগণের পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকর্তা হিসেবে পরিচিত হবে। বিচার বিভাগকে পৃথক করে তদুপরি বিচারের আগেকার মতো পঞ্চায়েত পদ্ধতি বা ঢাকা শহরের মহল্লার সর্দার দ্বারা জনপ্রতিনিধিমূলক বিচার-ব্যবস্থার নতুনরূপে পুনঃপ্রচলন প্রয়োজন। ঢাকা শহরের রাস্তাঘাটের সংখ্যা আরও প্রচুর পরিমাণে বাড়াতে হবে, বুড়িগঙ্গার দুই পাড় জাতীয় উদ্যানে পরিণত করতে হবে। এজন্য বাণিজ্যিক লঞ্চ-ঘাট আরও দক্ষিণে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এখনই প্রয়োজন। এই সঙ্গে সবুজ উন্মুক্ত প্রান্তরের সংখ্যা ও আয়তন বাড়াতে হবে। যানবাহন ও যাতায়াতের ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ঢাকা শহরে বৃহত্তর সীমারেখা দিয়ে ভূ-উপরি রিং রোডের সঙ্গে বিদ্যুত্ ট্রেন চালু করাসহ ভূ-তল ট্রেনের ব্যবস্থা করা এখনই প্রয়োজন। ঢাকা ও অন্যান্য শহরের নিমাণ কার্য নিয়ন্ত্রণ-সুরক্ষা করার জন্য দেশে স্থপতি-আইন প্রবর্তন এখনই প্রয়োজন; যেখানে কর্মকর্তা, গ্রাহক ও স্থপতির জবাবদিহিতাসহ তাদের স্বার্থরক্ষার ব্যবস্থাও থাকবে। নাগরিক অধিকার বলবত্ করাসহ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী ঢাকা বা অন্যান্য শহরের পরিকল্পনায় অন্যতম বিষয় ও অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হওয়া এখনই প্রয়োজন। তা না হলে এই প্রিয় ঢাকা শহর দুঃখ ও হতাশার অন্ধকারে চিরকাল ঢাকা পড়ে থাকবে।

পদে পদে ভোগান্তি শ্রম আদালতে

সরেজমিন

পদে পদে ভোগান্তি শ্রম আদালতে

ঢাকার শ্রম আদালতের আইনজীবীরা তাঁদের নির্ধারিত পোশাক এবং পরিচয়পত্র পরছেন না। ফলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, কে আইনজীবী আর কে নন। এ সুযোগে অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। পেশকার, পিয়নদের বাড়তি খরচা আর কোর্ট ফির নাম করে দালালদের প্রতারণা হরহামেশাই দেখা যায়

১.
কাশেম মোল্লা (ছদ্মনাম) নামের এক ব্যক্তি চাকরি করতেন একটি বহুজাতিক কোম্পানিতে, গাড়িচালক হিসেবে। সাত মাস চাকরি করার পর স্থায়ী করা হয় এবং স্থায়ী করার দুই মাস পর তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় কোনো বেতন বা মজুরি পরিশোধ ছাড়া। ঢাকার শ্রম আদালতে কাশেম মামলা করেন বকেয়া মজুরি পরিশোধের জন্য। ২০০৮ সালের শেষের দিকে তিনি শ্রম আইন ২০০৬ অনুযায়ী একটি ফৌজদারি মামলা এবং একটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন। দুই বছর পার হয়ে গেলেও মামলা দুটির কোনো সুরাহা হচ্ছে না। বরং শ্রম আদালতের পেশকার, পিয়নদের দ্বারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তিনি। নিজের আইনজীবীর ফি মেটাতে এবং পেশকার, পিয়নদের বাড়তি খরচাপাতি ঢালতে ঢালতে এ পর্যন্ত প্রচুর টাকা চলে গেছে চাকরিহীন কাশেমের। তাঁর অভিযোগ, একদিকে প্রতিপক্ষের বড় কোম্পানির ব্যারিস্টার সাহেবদের বারবার সময় নেওয়ার কারণে তাঁর মামলা দুটি ঝুলছে দুই বছর ধরে, অন্যদিকে প্রতি তারিখে পেশকার, পিয়নদের খরচাপাতি না দিলে মামলার নথি উঠতে চায় না বিচারকের টেবিলে।

২.
রুবিনা আক্তার (ছদ্মনাম) চাকরি করতেন একটি কারখানায়। তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হলে তিনিও মামলা করেন শ্রম আদালতে। প্রথমে তাঁর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে দালাল ধরেন তিনি। দালাল উকিল ধরে দেওয়ার নামে চার হাজার টাকা নেন এবং কোর্ট ফির নামে আরও এক হাজার টাকা নেন। পরে কয়েক মাস ঘুরেও উকিলের দেখা মেলেনি তাঁর। সেই দালালকেও আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে আদালতের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারলেন, এ আদালতে মামলা করতে কোনো কোর্ট ফিই লাগে না।

৩.
একজন ভুয়া কর্মচারী দ্বারা একটি মিথ্যা মামলায় হেনস্থা হচ্ছে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি। ওই কোম্পানির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ভিনদেশি। ব্যবসায়িক কাজে প্রায় সময়ই থাকতে হয় দেশের বাইরে। আদালতে মিথ্যা মামলাটির কারণে কর্মকর্তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দিনের পর দিন। প্রতিপক্ষ বারবার সময় নেওয়ার কারণে বিদেশি কর্মকর্তারা সময়মতো আদালতে হাজির হতে পারছেন না। সম্প্রতি একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় সমন জারি করা হলে তিনি হাজির হন আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন চাইতে। এসে দেখেন, সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ছুটিতে আছেন। পরে পেশকার, পিয়নদের অনেক অনুরোধ করে আবেদনটি অন্য একটি আদালতে (চার্জে থাকা) শুনানি করা হয়। কিন্তু আদালত সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক না আসা পর্যন্ত জামিন মঞ্জুর করেন। ওই কর্মকর্তা পড়েন সমস্যায়। বাইরে বেশির ভাগ সময় অবস্থান করায় নির্ধারিত তারিখে হাজির না হলে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হতে পারে। আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজির হওয়ায় আবেদনেরও শুনানি হয়নি।

৪.
ফৌজদারি মামলায় অভিযুক্ত একটি কোম্পানির কর্মকর্তার জামিন আবেদনের নকল তুলতে ভোগান্তিতে পড়েন সংশ্লিষ্ট মামলাটির আইনজীবী। আদালতের কর্মচারীরা জানান, বিচারক জামিনের আদেশে সই করে যাননি এবং তিনি কয়েক দিনের ছুটিতে গেছেন। পরে বেশ কয়েক হাজার টাকার বিনিময়ে নকলের কপি সরবরাহ করে দেবেন বলে কর্মচারীরা জানান। পরে অতিপ্রয়োজনের কারনে এই টাকা দিতেই রাজি হন পক্ষ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এ জামিনের আদেশ কপিতে বিচারকের সই ছিল। শুধু বড় কোম্পানি দেখে কিছু টুপাইস কামিয়ে নেওয়ার জন্য কর্মচারীরা এ নাটক সাজিয়েছেন।
ঢাকায় শ্রম আদালতের ঝুলে থাকা মামলার সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। এ অনুপাতে নিষ্পত্তি কম। বিচারকসংকট, অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধার ঘাটতির কারণে সাধারণ শ্রমিক ও বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। সরেজমিনে দেখা গেছে, আদালতের কক্ষগুলো জরাজীর্ণ এবং এত ক্ষুদ্র পরিসরে তৈরি করা যে আইনজীবীদের গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সাধারণ বিচারপ্রার্থীদের জন্য নেই কোনো বসার জায়গা। আদালতের কক্ষগুলোর সঙ্গে টয়লেটের অবস্থান হওয়ায় দুর্গন্ধে দম ফেলাই দায়। নোংরা পরিবেশ এবং চেয়ার-টেবিলগুলোর অধিকাংশ ভাঙাচোরা। বিদ্যুৎ চলে গেলে নেই জেনারেটরের ব্যবস্থা।
দেখা গেছে, শ্রম আদালতের আইনজীবীরা তাঁদের নির্ধারিত পোশাক এবং পরিচয়পত্র পরছেন না। ফলে সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন, কে আইনজীবী আর কে নন। এ সুযোগে অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে প্রতারিত হচ্ছেন। পেশকার, পিয়নদের বাড়তি খরচা আর কোর্ট ফির নাম করে দালালদের প্রতারণা হরহামেশাই দেখা যায়।
আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি আদালতে নির্ধারিত পোশাক পরে আসা বাধ্যতামূলক থাকলেও শ্রম আদালতে বাধ্যবাধকতার রেওয়াজ গড়ে ওঠেনি। ফলে তাঁরা পোশাক বিধির বিষয়টি এড়িয়ে যান। ফলে বিচারপ্রার্থীরা হয়রানিতে পড়ছেন বলে তাঁরাও মনে করেন।
ঢাকার শ্রম ভবনের পাঁচ ও ছয় তলায় শ্রম আদালতের অবস্থান। শ্রম ভবনের নিচে প্রতিনিয়তই দালাল চক্রের দেখা মেলে। শ্রম ভবনের নিচে গড়ে উঠেছে কিছু টাইপ রাইটারের দোকান। এখান থেকে বিভিন্ন আবেদন, ওকালতনামা, হাজিরা কাগজ বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। সাধারণ শ্রমিকদের পক্ষে নির্ধারিত খরচের বাইরে এসব ব্যয়ভার বহন করা অনেকটাই দুঃসাধ্য। ফলে অনেকে শ্রম আদালতে প্রাথমিক মামলা দায়ের করলেও পরবর্তী প্রতিটি তারিখে মামলা পরিচালনা করতে উৎসাহিত হচ্ছেন না। ফলে মামলার দীর্ঘসূত্রতা ও মামলাজট বেড়ে যাচ্ছে।

 ছিপ-বড়শির খেলা



ছিপ-বড়শির খেলা

মিল্লাত হোসেন

সৈয়দ আব্দুল হাদী। তাঁর কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। কিন্তু ছিপ-বড়শি হাতেও যে তিনি জাদু দেখান, সে কথা জানে কজনা। অবসর পেলেই শৌখিন মৎস্যশিকারি সৈয়দ আব্দুল হাদী ছুটে বেড়ান ঢাকা কিংবা আশপাশের কোনো জলাশয়ে।
জলাশয়ে ছিপ-বড়শি ফেলাতেই শৌখিন মৎস্যশিকারিদের যত আনন্দ। টোপ আর মাছের এই খেলা মেটায় কারও শখ অথবা নেশা। নগরে ছিপ-বড়শির চর্চা কিন্তু নতুন নয়। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই চলে আসছে মাছ ধরার এই শৌখিনতা। তবে বিখ্যাত আর অখ্যাত ছিপ-বড়শিপ্রিয় সব মানুষ একই প্লাটফরমে এসেছেন ১৯৬৮ সালে। তখন গড়ে ওঠে বাংলাদেশ শৌখিন মৎস্য শিকার সমিতি।
বাংলাদেশ শৌখিন মৎস্য শিকার সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শাহনেওয়াজ ভুঁইয়া জানান, ঢাকায় এখন ছিপ-বড়শি দিয়ে মাছ ধরার প্রধান জায়গা ধানমন্ডি লেক। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে অবশ্য মাছ ধরার প্রধান কেন্দ্র ছিল রমনা লেক। এখন রমনা লেক ছোট হয়ে গেছে। নেই কোনো মাছ। দূষণের কারণে এক দশক ধরে কোনো মাছ টিকতে পারছে না গুলশান, বারিধারা লেকেও। এখনকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ছিল আফিলুদ্দিন সরদারের দিঘি; ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও জাতীয় ঈদগাহে ছিল বড় পুকুর। এসব জলাশয়ে শৌখিন লোকেরা টিকিট কেটে ছিপ-বড়শি ফেলতেন।
বাংলাদেশ শৌখিন মৎস্য শিকার সমিতি এবং গুলশান শৌখিন মৎস্য শিকার সমবায় সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন গুণী সংগীতশিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। মাছ শিকারের জগতে তাঁর পদচারণার বয়স প্রায় চার দশক। তাই ভান্ডারে জমেছে মাছ শিকারের নানা স্মৃতি। এমনি একটি ঘটনা শোনা যাক গুণী এই সংগীতশিল্পীর বয়ানেই, ‘৭৯ বা ৮০ সালের ঘটনা। তখন অফিস ব্যাগে গুটানো থাকত ছিপ-বড়শি। অফিস থেকে বের হয়ে বিকেলে চলে যেতাম ধানমন্ডি লেকে। এখন লেকের যেখানে রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রের অবস্থান, সেই বরাবর লেকের অপর পাড়ে ছিল সংগীতজ্ঞ সুধীন দাশের মাচা। তাঁর মাচায় বসেই আমি মাছ ধরতাম। একদিন বিশাল একটি মাছ ধরা পড়ল আমার বড়শিতে। কিন্তু সুতা টেনে বড়শিতে গাঁথা মাছ টেনে আনা যাচ্ছিল না, লোক ডাকতে হলো। নৌকা দিয়ে দেড় ঘণ্টা পেছনে পেছনে ছুটে বড়শির মাছটি ধরা হলো। ওই মাছ নিয়ে সোজা চলে গেলাম বাংলামোটরে তখনকার কণ্ঠশিল্পী সমিতির কার্যালয়ে। সমিতির ২৮ জন সদস্যকে ভাগ করে দিলাম ৩৫ কেজি ওজনের সেই কাতলা মাছ।’ খাওয়া নয়, মাছ বিলিয়ে দিতেই বেশি আনন্দ পান শৌখিন মৎস্যশিকারিরা। বিষয়টি বোঝা যায়, সৈয়দ আব্দুল হাদীর স্মৃতিচারণায়।
নগরে মাছ ধরার জায়গা কমলেও বাড়ছে মৎস্যশিকারির সংখ্যা। প্রায় আট হাজার শৌখিন শিকারি চষে বেড়ান ধানমন্ডি লেক ছাড়াও ঢাকা চিড়িয়াখানা, জাতীয় সংসদ ভবন লেক, বংশাল পুকুর, নবাববাড়ির গোলতালাবসহ নগরের ছোট-বড় জলাশয়ে। আবার অবসর পেলেই ছিপ-বড়শি নিয়ে অনেকে মাছ ধরতে ছুটে যান ঢাকার কাছে সাভার, ধামরাই, মৌচাক, ফতুল্লা, ভুলতা ও মাওয়ায়। আবার বছরে একবার-দুবার ঢাকা থেকে দূরে যেতেও ছাড়েন না তাঁরা।
সাগর আর নদী ছাড়া সব জায়গায়ই টিকিট কেটে ছিপ-বড়শি ফেলতে হয় মৎস্যশিকারিদের। টিকিট ছাড়া মাছ ধরতে শৌখিন লোকেরা ঢাকার আশপাশে যেসব নদীতে যান, তার মধ্যে আছে বংশী নদীর হেমায়েতপুর, ইটাখোলা, জয়মণ্ডপ ও লঙ্কারচর এলাকা এবং বুড়িগঙ্গা নদীর ফতুল্লার কাউটাইল এলাকা। কেউ কেউ নৌকায় চড়ে ছিপ-বড়শি ফেলেন মেঘনা নদীর বাবুরহাট ও বারুদী এলাকায়। দুর্গম পথ, দূরত্ব কিংবা বিরূপ আবহাওয়া কোনো কিছুই দমিয়ে রাখতে পারে না শৌখিন ব্যক্তিদের। নিতান্তই রোমাঞ্চ মেটাতেই তাঁদের ছুটে চলা। তাই দিনমান বৃষ্টিমুখর গত ৮ অক্টোবরে ঘরে না থেকে ধানমন্ডি লেকে ছিলেন মান্ডার বাসিন্দা এম কে জামান। ওই দিন তাঁর বড়শিতে ধরা দিয়েছে তিনটি বিগ হেড কার্প আর একটি কাতলা। তার পরদিন শনিবারে পেয়েছেন আরেকটি বিগ হেড কার্প। তিন দশকের ঝানু শিকারি জামান জানান, আগে শুধু রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ মাছ পাওয়া যেত। এখন যুক্ত হয়েছে হাইব্রিড মাছ। এর মধ্যে আছে বিগ হেড কার্প, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, চাষের পাঙ্গাশ ইত্যাদি।
ধানমন্ডির লেক বলুন, আর চিড়িয়াখানার লেক বলুন, এসব লেকে ছিপ ফেলে যাঁরা দিনভর বসে থাকেন, তাঁদের আধার কিন্তু একটা না একটা সময় গিলে খায় মাছ। তখনি সুতায় পড়ে টান, টোন বা ফাতনা পানিতে ডোবে আর ভাসে। টের পেয়েই ছিপের গোড়ার হুইল দ্রুতলয়ে গোড়াতে থাকেন শিকারি। কিন্তু মাছ আর মেলে না সবার ভাগ্যে। চালাক মাছ কৌশলে আধার গিলে আগেই লাপাত্তা। শূন্য বড়শিতে আবার আধার দিয়ে দূর জলাশয়ে ছুড়ে মারেন শিকারি। আবার মাছের জন্য প্রতীক্ষা তাঁর। এমনও দিন যায়, একটা মাছও জোটে না শিকারির বড়শিতে। এক শনিবারের সন্ধে নামতে শূন্য হাতেই ঢাকা চিড়িয়াখানার লেক থেকে ফিরে যাচ্ছিলেন মিরপুরের সাইদ আহমেদ। শৌখিন এই মৎস্যশিকারি বলেন, ‘মাছ পাওয়া বড় বিষয় নয়। ছুটির দিনে ছিপ ফেলে বসে থাকলে মনটা ফ্রেশ হয়। আবার ধৈর্যশক্তি বাড়ে। ছিপ-বড়শির খেলা বলতে পারেন আমার শখ বা নেশা।’
ছিপ-বড়শি নিয়ে জলাশয়ে শৌখিনদের কাণ্ডকীর্তি পৃথিবীজুড়ে একটি ক্রীড়া-বিনোদন হিসেবেই স্বীকৃত। তাই এ দেশের সরকার এটাকে খেলা হিসেবেই স্বীকৃতি দেবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ শৌখিন মৎস্য শিকার সমিতির সদস্যরা। তবে এর উল্টোটাই এখন করছে ঢাকা নগরের প্রশাসন। একটা সময় ধানমন্ডি লেকের মাছ চাষ ও ধরার বিষয়টি পরিচালনা করত বাংলাদেশ শৌখিন মৎস্য শিকার সমিতি। লেকের পাড়ে ছিল তাদের স্থায়ী কার্যালয়। লেক সংস্কারের নামে ১৯৯৮ সালে ডিসিসি ভেঙে ফেলে সেই কার্যালয়। তখন লেক থেকে শিকারিদের মাচাগুলোও উপড়ে ফেলা হয়। তবুও একটি তাঁবু গেড়ে কাজ করে যাচ্ছিল সমিতি। কিন্তু সম্প্রতি সেই তাঁবুও উপড়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে গুলশান লেক দূষণমুক্ত না হওয়ায় সেখানকার গুলশান শৌখিন মৎস্য শিকার সমবায় সমিতির কার্যক্রমও থেমে গেছে। তাই অনেকটা দাবি জানিয়ে সৈয়দ আব্দুল হাদী বললেন, ‘নগরের অন্যান্য বিনোদনের জায়গার মতো মৎস্য শিকারের জায়গাও কমে আসছে। এ অবস্থায় লেকগুলো দূষণমুক্ত করে সেগুলো মৎস্যশিকারিদের হাতে ছেড়ে দিতে হবে। আমরা সরকারকে নিয়মিত রাজস্ব দেব। ঢাকার মৎস্য শিকার চর্চার ঐতিহ্য রক্ষার দায়িত্ব আমাদের একার নয়, সরকারেরও কিছু দায়িত্ব আছে।’