Pages

Search This Blog

Tuesday, January 18, 2011

রূপবদলের ঢাকা

রূপবদলের ঢাকা


ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল শুক্রবারে প্রায় জনমানবশূন্য রাজিব পাল
প্রতিনিয়ত বদলায় ঢাকার রঙ। সি্নগ্ধ ভোরের ঢাকা, যানজটে অচল মধ্যদুপুর, সন্ধ্যায় ক্লান্ত মানুষের ঘরে ফেরার উৎসব আর প্রহরীর হুশিয়ারি নিয়ে রাতের রঙিন ঢাকা। রোব ও বৃহস্পতিবারের ঢাকা সত্যিকার অর্থেই অন্য যে কোনো দিনের থেকে আলাদা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের অন্যরকম এক চাঞ্চল্য ঢাকাকে করে বৈচিত্র্যময়। আকাশের রঙের মতোই ঢাকার মন বোঝা দায়। এ নিয়ে প্রধান প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আর ডি বিপ্লব
প্রতিনিয়ত বদলায় ঢাকার রঙ। সি্নগ্ধ ভোরের ঢাকা, যানজটে অচল মধ্যদুপুর, সন্ধ্যায় ক্লান্ত মানুষের ঘরে ফেরার উৎসব আর প্রহরীর হুশিয়ারি নিয়ে রাতের রঙিন ঢাকা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের অন্যরকম এক চাঞ্চল্য ঢাকাকে করে বৈচিত্র্যময়। আকাশের রঙের মতোই ঢাকার মন বোঝা দায়। গ্রীষ্মের খরতাপে পথের মোড়ে মোড়ে আখের রস অথবা কোমল পানীয়ের দোকানে ভিড়। এক বর্ষা থেকে আরেক বর্ষায় রাস্তার কাদামাখা হাঁটুপানিতে পথশিশুদের উৎসব, সুযোগসন্ধানী রিকশা-সিএনজিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য, শীতের সকালে অলিগলিতে ভাসমান ভাপা পিঠার দোকান, ঢাকার চিরচেনা গল্প। প্রায় বিশ মিলিয়ন লোকের এ জনপদে দিনের গল্পের প্রায় পুরোটাই ট্রাফিক জ্যাম, ব্যস্ত মানুষের ছোটাছুটি। কারও যেন কোনোদিকে তাকানোর অবকাশ নেই। সেই ভোরে, পাখির কলরব শুরু হওয়ার আগেই অভিজাত আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা ছোটেন প্রাতঃভ্রমণে। দলে দলে মানুষ ঘর থেকে বেরোয় কাজের সন্ধানে। চোখে পড়ে সেলাই দিদিমণিদের দীর্ঘ পথচলা। সূর্য যখন মাথার উপর স্থির হয়, ঢাকাও তখন স্থির হয়ে যায় জ্যামের কল্যাণে।
অফিস শুরু ও ছুটির সময়টায় বাস, সিএনজি, রিকশা এক কথায় তীব্র যান সংকট। লোকাল বাসগুলো তখন সিটিং সার্ভিসে রূপ নেয়। ফার্মগেট, মতিঝিল, গুলিস্তান, গুলশান-১ ও ২সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় বাস কাউন্টারের সামনে টিকিট হাতে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন শুধু ঢাকাতেই চোখে পড়ে।
রাতের রঙিন ঢাকা, ঢাকার অন্য এক রূপ। চৌরাস্তার উঁচু ল্যাম্পপোস্ট, শাহবাগ, টিএসসির মোড়, কবি আর কবিতায় মুখরিত আড্ডা, কারওয়ান বাজারে ভ্যান কিংবা বাঁশের টুকরির মধ্যে বড় ক্লান্ত মানুষের সুখনিদ্রা; কমলাপুর, তেজগাঁও, টঙ্গী রেলস্টেশনে ভাসমান মানুষের ভিড় আর অভিজাত হোটেল, মোটেল, ক্লাব, পার্টি হাউসে জমকালো ফ্যাশন শো, ডিজে পার্টি, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা ফুটপাতের স্টিলের ওভারব্রিজে নিশিকন্যাদের করুণ বাস্তবতা, ভাঙা মন নিয়ে ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডিসিসির শ্রমিকদের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সর্বাধুনিক ব্যাংকিং এটিএম বুথের পাশে ঢুলুঢুলু চোখে জীর্ণ প্রহরী, আইকা গাম-মই নিয়ে একদল শিশুর দেয়াললিখন আর পোস্টারে নগর ছেয়ে ফেলার শপথ, এর ফাঁকে ফাঁকে নেশার আড্ডা, থানার সেল কিংবা অজ্ঞাত কোনো স্থান থেকে ভেসে আসা বুলেটের শব্দে অবুঝ শিশুর ঘুম ভেঙে যায়। কিছুতেই শিশুটির কান্না থামে না। সারারাত তাকে বুকে নিয়ে অজানা আতঙ্কে মায়ের নির্ঘুম রাত, ভোরের অনন্ত অপেক্ষা। অপেক্ষা রেকর্ডিং স্টুডিও ক্রুর কখন ভোর হবে, ওঁৎ পেতে থাকা কোনো অশুভ চক্রের অপেক্ষা, মানুষ বড় চালাক হয়ে গেছে_ পকেটে দামি মোবাইলও রাখে না, খরচের টাকা ছাড়া কোনো টাকাও থাকে না।
রোববার ও বৃহস্পতিবারের ঢাকা সত্যিকার অর্থেই একটু আলাদা। ঢাকার আশপাশে যাদের বাড়ি, সপ্তাহজুড়েই তাদের অপেক্ষা এ সময়ে ছুটে যাবেন নাড়ির টানে। প্রিয়জনের মুখ এক পলকের জন্য দেখতে অস্থির হয়ে ওঠে কর্মব্যস্ত মানুষ। কোনো সন্দেহ নেই বৃহস্পতিবারের শেষ বেলাটুকু যেন শেষ হতে চায় না তাদের। অফিস শেষে ছুটে যান কাছের কোনো মার্কেটে। কেনাকাটার সময় দোকানির সার্ভিসকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধীরগতির অলস সার্ভিস বলে তাদের মনে হয়। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন যানবাহনে চাপ পড়ে সবচেয়ে বেশি। একটু অন্য চোখে তাকালেই দেখা যায়, এদিন ঢাকায় ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেকাংশে। মানুষের টানটান উত্তেজনা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় প্রায়ই। একই চিত্র রোববারেও। পার্থক্য শুধু বৃহস্পতিবারের বিকেলের দৃশ্য রোববারের সকালে প্রভাব পড়ে। শুরু হয় আরও একটি সপ্তাহের সূর্যোদয়। শুক্রবারের ঢাকা প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। এদিন রিকশা, সিএনজি, বাস মেলে অনায়াসেই। লাইনে ঘেমে গোসল করতে হয় না, সিএনজি-রিকশা যেখানেই বলি না কেন যেতে চায় এক কথায়ই, বাড়তি ভাড়া তো দূরে থাক ন্যায্য ভাড়া থেকে কিছু কমেও ওরা যেতে চায়। কিন্তু যাবটা কোথায়, অলস সময় কাটানোই যে আজ বড় কাজ! রিকশাওয়ালাদের শুক্রবার মানেই ঈদের দিন। কারণ ওইদিন মহাজনকে কোনো জমা দিতে হয় না। আক্ষেপের সুরে কেউ কেউ বলেন_ আহ, এমন যদি প্রতিদিনের ঢাকা হতো! বিকেলে ওয়ান্ডার ল্যান্ড, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা, সংসদ ভবন, নন্দন কিংবা ফ্যান্টাসি কিংডমে মানুষের জোয়ার।
এছাড়াও রোজা এলেই বাড়তি কিছু রোজগারের আসায় দলে দলে মানুষ ঠাঁই নেয় প্রিয় ঢাকার বুকে। বিশ্ব ইজতেমায়, আন্তর্জাতিক কোনো ক্রিকেট অথবা আর্মি স্টেডিয়ামে ওপেন এয়ার কনসার্টে ঢাকার বাইরে থেকে ছুটে আসে লাখো মানুষ। এছাড়া বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ, হাসপাতাল ও অন্যান্য কাজে ঢাকায় আসা-যাওয়া করে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সবকিছুর পরও ঢাকার ক্রমাগত রূপবদল আমাদের মুগ্ধ
করে নিঃসন্দেহে।

No comments:

Post a Comment