Pages

Search This Blog

Wednesday, December 1, 2010

নগর সভ্যতায় বিতাড়িত ফুল কচুরিপানা

নগর সভ্যতায় বিতাড়িত ফুল কচুরিপানা

রণদীপম বসু

সাত-আট বছর বয়সি স্কুলপড়-য়া শিশুকে এক জিজ্ঞেস করলাম, বাবু, গোলাপ চেন? অনায়াসে উত্তর দিল, 'হঁ্যা'। কী রকম দেখতে? 'লাল'! কচুরিপানার ফুল দেখেছ? এবার তার চোখে অচেনা আভা। কাদা-পানির উত্তরাধিকারী বাঙালি সন্তান কচুরিপানার ফুল চেনে না। এ শিশুর দোষ কি! সে জানবে কোত্থেকে! অফিসের সহকর্মী থেকে শুরু করে পরিচিত-অপরিচিত অনেকের কাছেই জানতে চাইলাম, এখন ঢাকা নগরীর কোথায় গেলে কচুরিপানার ফুল দেখা যাবে? তারা নির্দ্বিধায় বলে দিলেন, যেকোনো মজা পুকুর বা ডোবায় গেলেই তো দেখা যায় ! সেটা কোথায়, কাছাকাছি একটা লোকেশান বলেন ? সুনির্দিষ্ট প্রশ্নে এবার সবারই আমতা-আমতা ভাব। তাই তো !

হালকা বেগনি চ্যাপ্টা পাপড়ির চিরপরিচিত ফুলের উজ্জ্বল বেগনি আভাই তো হেমন্তের আগমনী সুর। এই ফুল চেনে না এমন বাঙালি কি আছে ! গ্রাম-বাংলা-শহর-নগরের এঁদো-ডোবায় জলজ উদ্ভিদ হিসেবে বিরক্তিকরভাবে এতো বেশি জন্মায় বলেই হয়তো চিরপরিচিত এ ফুলটির সৌন্দর্য ও গঠন বৈশিষ্ট্য আমরা অনেকেই গভীরভাবে খেয়াল করি না। কচুরিপানা ফুল হিসেবে আমরা যেটিকে দেখি, তা স্বাভাবিকভাবে ছয় পাপড়ি বিশিষ্ট পাঁচ-ছয়টি ফুল নিয়ে একটি গুচ্ছ ফুল। এবং ভালো করে খেয়াল করলে দেখা যাবে যে গুচ্ছের প্রতিটা ফুলের ছ'টির মধ্যে একটিমাত্র পাপড়ির বুকে নীলচে আল্পনার মাঝখানে একটি চৌকোনা হলদে টিপ। প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালের অসাধারণ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন এ ফুলটি আজ অনেককিছুর মতোই এই নগরী থেকে বিতাড়িত প্রায়।

সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্যামেরাটা কাঁধে নিয়ে কচুরিপানা ফুলের খোঁজে বেরিয়ে গেলাম। ঢাকা নগরীর আগ্রাসী ক্ষুধায় পুকুর ডোবা জলাশয় উধাও। শেষপর্যন্ত সম্ভাব্য স্পট হিসেবে বোটানিক্যাল গার্ডেনই বেছে নিলাম। বিশাল এলাকা তন্নতন্ন খুঁজে পরিত্যক্ত ডোবায় কচুরিপানা পেলেও এদের ফুলহীন বন্ধ্যা অস্তিত্ব জানিয়ে দিলো এ নগর সত্যিই প্রকৃতির স্বভাববিমুখ। অবশেষে গার্ডেনের শেষ প্রান্তে বিমান বাহিনীর সংরক্ষিত এলাকার পাশ ঘেঁষে নির্জন পথ মাড়িয়ে আমিন বাজারগামী বেড়িবাধে উঠলাম ফেরার উদ্দেশ্যে। বিষণ্ন মনে রিক্সা বা টেম্পো কিছু একটা খুঁজতে খুঁজতে আনমনে হাঁটছি। হঠাৎ চমকে উঠলাম-ইউরেকা! ওই তো! ঝটকায় ক্যামেরাটা তুলেই ক্লিক ক্লিক। কিন্তুঃ। আবহই বলে দিচ্ছে আর কয়েকটা দিন পর এই শেষ চিহ্নটাও থাকবে না আরেকটা ক্লিক-বন্দী হবার অপেক্ষায়। নগরীর পাইথন-ক্ষুধা এই ছোট্ট ডোবা গিলে আরো বহুদূরগামী এখনঃ।

No comments:

Post a Comment