Pages

Search This Blog

Tuesday, January 18, 2011

রাতের রাজপথ বাসের দখলে

রাতের রাজপথ বাসের দখলে

রাতের রাস্তায় এভাবেই রাখা হয় সারি সারি বাস ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
জহিরুল আলম পিলু
যে রাজধানী নগরী সারাদিন অসংখ্য বাস আর যানবাহনের ভিড়ে ত্রাহিদশা, সেই নগরীই সব কোলাহল শেষে রাত ১২টার পর প্রায় নির্জন হয়ে পড়ে । অসংখ্য বাস চলে দিনভর, কিন্তু বাসগুলোর মালিকরা কি কোনো গ্যারেজ বা বাস রাখার স্থান সংরক্ষিত করেছেন? সম্ভবত না। তাহলে ঢাকার রাজপথ থেকে মহল্লার অলিগলির রাস্তা কেন রাতের বেলা চলে যাবে এসব বাসের দখলে।এখন প্রশ্ন হলো_ এসব বাস কোম্পানির বাস রাখার নিজস্ব বা নির্দিষ্ট কোনো স্থান কেন থাকবে না। ঢাকা শহরে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিচালনার জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত একাধিক বাস টার্মিনাল থাকলেও শহরের তেজগাঁও প্রগতি সরণি, ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল এমনকি নির্দিষ্ট টার্মিনালগুলোর বাইরের রাস্তাগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে সারারাত রাস্তার ওপর পার্কিং করতে দেখা যায় অসংখ্য বাস। সরেজমিনে দেখা যায়, সারারাত কমলাপুর থেকে শাহজাহানপুর রোডে সোহাগ, তিশা, তিতাস, রাহবার ৬নং নটর ডেম কলেজের আশপাশে শ্যামলী, হানিফ, ঈগল পরিবহনসহ বিভিন্ন সার্ভিসের বাস, অন্যদিকে তেজগাঁও, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, সায়েদাবাদের রাস্তাগুলোতে নামিদামি কোম্পানি সৌদিয়া, স্কাইলাইন, হানিফ, বলাকা পরিবহনসহ বিভিন্ন সার্ভিসের বাসের দখলে চলে যায়।
এসব স্থানে বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের আস্তানাও বটে। সরেজমিনে দেখা যায়, কমলাপুর-শাহজাহানপুর রাস্তার উভয় পাশে এবং এর আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের আড়ালে চলে গাঁজা বিক্রি, সেবন, ছিনতাই এমনকি দেহ ব্যবসা। কমলাপুর-শাহজাহানপুর রাস্তার ডানপাশ দিয়ে এগিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতের ওপর চাদর ও ছালা দিয়ে তৈরি ২-৩টি ছাউনি। বাসের আড়াল ও রাস্তার বাতিগুলো অকেজো হওয়ায় এই ছাউনিগুলোর ভেতরে সারারাত চলে দেহ ব্যবসা। রাজা নামক এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে চলে এখানকার অবৈধ কার্যক্রম। মিরপুর ১৪ নম্বর চাইনিজ রেস্টুরেন্টের পাশেই মিরপুর-গুলিস্থান রুটের ১৪ নম্বর বাসের ভেতরই চলে অভিনব উপায়ে দেহ ব্যবসা। সামনের দুই সিট একসঙ্গে করে কয়েল জালিয়ে ঘুমের ভান করে পুলিশ ও পথচারীর দৃষ্টি সরিয়ে রাখে, তৎপর একাধিক হ্যান্ডশেক পার্টি ।
গুলিস্তানে দোকানদাররা জানান, রাত হলেই এখানে বাসের আড়ালে ও আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন ছিনতাইকারী, চোর ও মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীরা; কিন্তু দেখে বোঝা যাবে না এরা ছিনতাইকারী, না বাসের স্টাফ। কিছুদিন আগে এক পথচারীর ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। আর মোবাইল চুরি তো আছেই। এ ব্যাপারে এক পুলিশ সদস্য জানান, আমাদের উপস্থিতিতে কোনো কিছু হয় না।
ঢাকা শহরের সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, কল্যাণপুরসহ ৭টি বাস ডিপো বা টার্মিনাল রয়েছে। এসব ডিপোর কাছে বিভিন্ন বেসরকারি কাউন্টার বা টার্মিনাল গড়ে ওঠায় বিপাকে পড়েছেন এর কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণের। সরেজমিনে দেখা যায়, মতিঝিল বিআরটিসি বাস ডিপো একটি আন্তর্জাতিক ডিপো হলেও বেসরকারি বাসগুলো দিনরাত পার্কিংয়ের কারণে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের হয়রানি হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে মতিঝিল ডিপোর ঊর্ধ্বতন একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, এসব সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমরা ২০০৭ সাল ও গত ১৪ জুলাই এসব বাস সার্ভিসের কাউন্টারগুলো অপসারণের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক (পূর্ব) ডিএমপি বরাবর আবেদন করেও কোনো ফলাফল এখনো পাইনি।
বিভিন্ন বাস সার্ভিস কোম্পানির কর্মকর্তারা রাতে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা সম্পূর্ণ অন্যায় স্বীকার করে বলেন, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে। কয়েকটি নামিদামি কোম্পানির কর্মকর্তারা আরও জানান, আমাদের দামি বাসগুলোও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় রাখতে হচ্ছে। ফলে মাদকসেবীরা বাসের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। তারাও চান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন একটি নির্দিষ্ট স্থান করে দেন। জানা যায়, এসব বাস কোম্পানি রাস্তায় বাস পার্কিংয়ের জন্য প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকে। চুরি-ছিনতাই রোধ, রাতে যাত্রীদের চলাচলে নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাস্তা থেকে এসব অনুমোদনবিহীন টার্মিনাল অপসারণ করা হবে বলে প্রিয় ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা।
Source: Daily Samakal

No comments:

Post a Comment