Pages

Search This Blog

Wednesday, January 19, 2011

গাছশূন্য হয়ে পড়ছে ঢাকা


উদ্ভিদবিদরা বলছেন, শিকড় বিস্তারে যতটা জায়গা থাকার কথা, ঢাকার গাছগুলো সেটুকু না পেয়ে মরে যাচ্ছে। এর ফলে দিন দিন গাছশূন্য হয়ে পড়ছে ঢাকা। তেজগাঁও শিল্প এলাকা থেকে ছবিটি তুলেছেন সুদীপ্ত সালাম, সাপ্তাহিক ২০০০

রাজধানী ঢাকা পুকুর নেই খালও নেই

রাজধানী ঢাকা পুকুর নেই খালও নেই
by সাপ্তাহিক ২০০০ শুক্রবার 30 এপ্রিল 2010


একের পর এক ভরাট হচ্ছে ঢাকার পুকুর ও খাল। কমে আসছে জলাশয়ের সংখ্যা। সরকারি ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুকুর-খাল ভরাট করায় জীববৈচিত্র্যে ব্যাঘাত ঘটছে। সেই সঙ্গে দেখা দিচ্ছে জলাবদ্ধতা।
মৎস্য অধিদপ্তরের এক তথ্যে জানা যায়, ঢাকা মহানগরের পরিসংখ্যান অনুসারে ১৯৮৪ ও ১৯৮৫ সালে ঢাকায় পুকুরের সংখ্যা ছিল ২ হাজার এবং ১৯৮৮ ও ১৯৮৯ সালের দিকে কমে তা ১ হাজার ২শতে নেমে আসে। তিন বছর আগে মৎস্য ভবন থেকে পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে তা ২শতে নেমে এসেছে। মৎস্য ভবনে কর্মরত জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, ঢাকা শহরের পুকুরগুলো আমাদের আয়ত্তের মধ্যে না হলেও আমরা একটি সার্ভে করেছিলাম, যেখানে ২শর অধিক পুকুর পাওয়া যায়নি। তবে বর্তমানে অনেক পুকুর ভরাট করায় এই সংখ্যা আরও কমে এসেছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে হিসাব করলে ডোবা ও পুকুরের সংখ্যা ১শর অধিক হবে না। ঢাকা শহরে পুকুরের সঠিক সংখ্যা কত তার হিসাব নেই ঢাকা সিটি করপোরেশনে। এমনকি অতীতে কতটি ছিল তার কাগজও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুকুরের সংখ্যা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে ডিসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা আবদুর রহমান জানান, ঢাকা শহরের পুকুর সম্পর্কে আমার কোনও তথ্য জানা নেই। ডিসিসির অধীনে কতটি পুকুর আছে তার হিসাব মশক নিয়ন্ত্রণ শাখা বলতে পারবে, কারণ পুকুরে ওষুধ ছিটানোর কাজ তারাই করে। মশক নিয়ন্ত্রণ শাখার ঊর্ধ্বতন কীট-নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা ডা. নাসিম উস-সেরাজ এ ব্যাপারে বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি কত পুকুর আছে তার হিসাব আমার জানা নেই। আমাদের কাগজে এর হিসাব থাকলেও মূলকপিসহ সব কাগজ দুদকে পাঠানো হয়েছে। কোনও ফটোকপি কিংবা এ ব্যাপারে কোনও তথ্য এখানে নেই। ডিসিসি সূত্রে জানা যায়, ১০টি অঞ্চলে মোট পুকুর ও ঝিলের পরিমাণ ৫ হাজার ১শ ৪২ বিঘা। এর মধ্যে ১ নং অঞ্চলে পুকুর আছে ১ হাজার ২২ বিঘা, ৩ নং অঞ্চলে ২শ ৭০ বিঘা, ৪ নং অঞ্চলে ১ হাজার ৪২ বিঘা, ৫ নং অঞ্চলে ১শ ৭৪ বিঘা, ৬ নং অঞ্চলে ৫শ ৭ বিঘা, ৭ নং অঞ্চলে ৪শ ৬২ বিঘা, ৮ নং অঞ্চলে ৫শ ৫৩ বিঘা, ৯ নং অঞ্চলে ৬শ ৫৮ বিঘা, ১০ নং অঞ্চলে ১শ ৭৫ বিঘা এবং ঝিল আছে ১শ ৭৫ বিঘা। এর মধ্যে ২ নং অঞ্চলে রয়েছে নবাববাড়ি পুকুর, নয়াবাজারে হাজি আবদুর রশীদ লেনের বংশাল পুকুর ও আলু বাজারের সিক্কাটুলী পুকুর। এছাড়া অঞ্চল ৫-এ ৪৯ থেকে ৫৭ নং ওয়ার্ড পর্যন্ত আছে ১৮টি পুকুর, অঞ্চল-৩-এ আছে ২১টি এবং অঞ্চল-৬-এ আছে ২০টি পুকুর। এগুলোর কোনটি সরকারি আর কোনটি ব্যক্তিমালিকানাধীন তার হিসাব ডিসিসিতে নেই। পুকুরের সঠিক হিসাব সম্পর্কে পূর্ত বিভাগের উন্নয়ন ও সমন্বয় শাখাতে যোগাযোগ করা হলে তারাও কোনও হিসাব দেখাতে পারেনি।
ঢাকা শহরের বাসিন্দা আহমেদ মুসা বলেন, আগে অসংখ্য পুকুর থাকলেও বর্তমানে তা ভরাট করে বাসাবাড়ি করা হয়েছে। শাহবাগে বড় দুটি পুকুর ছিল, যার একটি আজিজ সুপার মার্কেট এবং অন্যটিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিব হল ও জিয়া হল করা হয়েছে। বাংলাভিশনের বিল্ডিংও ছিল বড় একটি পুকুর। আজিজ সুপার মার্কেটের পশ্চিম পাশেও একটি পুকুর ছিল, যেখানে পাওয়ার হাউস করা হয়েছে। ২২ তোপখানা রোডেও একটি পুকুর ছিল। যেখানে ওয়ার্কার্স পার্টির অফিসের বিল্ডিং তৈরি করা হয়েছে। শহরের শান্তিনগরের পীর সাহেবের গলিতেও অনেক বড় একটি পুকুর ছিল কিন্তু চারদিক থেকে ভরাট করার কারণে এটা এখন ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে। শহরের ঝিগাতলা, রায়েরবাজার এলাকায় প্রচুর ডোবা ছিল। এখন এ ডোবাগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে আছে বহুতল ভবন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসার দুবছরের মধ্যে সরকার নিজেই আইন অমান্য করে বাসাবো, খিলগাঁও, রাজারবাগ এলাকায় যে পরিমাণ পুকুর ছিল তার প্রায় সবই ভরাট করে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুকুর,কমলাপুর রেল স্টেশনের পূর্ব দিকে রেলের ঝিল, আহমদবাগ এলাকার ঝিলের নাম মানচিত্র থেকে উঠে গেছে। পুলিশ লাইনের পুকুরে বর্তমানে গাড়ি পার্ক করা হয়। রেলওয়ের ঝিল দুটিতে হাসপাতাল ও কমিউনিটি সেন্টার হচ্ছে। খিলগাঁও-এর বিখ্যাত পুকুর হয়ে গেছে খেলার মাঠ। পুরান ঢাকার শত বছরের ঐতিহ্য সিক্কাটুলী পুকুরটিও হুমকির মুখে। স্থানীয় ব্যক্তিদের অভিযোগ, একটি অসাধু গোষ্ঠী জাল দলিল করে পুকুরটি ভরাট করে দখলের পাঁয়তারা করছে। দখলকারীরা পুকুরের কিছু অংশ ভরাট করে নিজেদের সম্পত্তি বলে দাবি করছে। তারা সিক্কাটুলী পুকুর উদ্ধার করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।
ঢাকা শহরে পুকুরের সংখ্যা কমে যাওয়ায় আমাদের পরিবেশের ওপর যে প্রভাব পড়ছে সে সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. কাজী মোঃ ফজলুল হক বলেন, পুকুর ভরাটের ফলে প্রতিটি জীবের জীবন বৈচিত্র্যে ব্যাঘাত ঘটছে। পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। অল্প বৃষ্টিতে পানি বের হওয়ার জায়গা না থাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোথাও আগুন লাগলে পাশে পুকুর থাকলে পানি দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব কিন্তু পুকুরের অভাবে এবং ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে দেরিতে পৌঁছানোর কারণে প্রচুর জানমালের ক্ষতি হচ্ছে।

মহানগরের বাইরেও কমছে পুকুর
ঢাকা মহানগরের বাইরে সাভার, ধামরাই, কেরানীগঞ্জ, নবাবগঞ্জ ও দোহারেও কমছে পুকুরের সংখ্যা। ফলে এসব পুকুরে মাছের উৎপাদনও কমে এসেছে। আগে সরকারি পুকুর ছিল ১২৫টি, যার পরিমাণ ৭৫.৮২ হেক্টর এবং বেসরকারি ছিল ৬ হাজার ৭শ ১৩টি, যার আয়তন ৪৯৮৫ হেক্টর। ২০১০ সালের হিসাব অনুসারে খাস পুকুরের সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকলেও বেসরকারি পুকুরের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭শ ২৯টিতে। অর্থাৎ ১ হাজার ৯শ ৮৫টি পুকুর কমে গেছে। এ ব্যাপারে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা জেলার পাঁচটি উপজেলার মানুষ পুকুর ভরাট করে বিল্ডিং তৈরি করছে। এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পুকুর ভরাট করে বিক্রি করছে। ফলে পুকুরের সংখ্যা কমে আসছে।

অবশিষ্ট কিছু পুকুর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হলের পুকুর নিয়ে কুসংস্কার ছিলÑ এখানে গোসল করতে গেলেই মারা পড়ে লোকজন। এই কুসংস্কারের ভিত্তিটা যে কতটা পাকাপোক্ত সেটা টের পাওয়া যায় কর্তৃপরে সতর্কবাণী দেখে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের পুকুর আর জহুরুল হক হলের পুকুরেও সাঁতরানো যায় অনায়াসে।
রমনা পার্কের পুকুরটি অসম্ভব রকম সুন্দর। চারদিকে স্নিগ্ধ সুন্দর প্রকৃতি। তার মাঝখানে টলটলে জলাধার। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। তাই এখানে এলে পুকুরে নামতে ইচ্ছা করবেই। চাইলে পুকুরে সাঁতার কাটতে পারেন। তবে ততণ, যতণ পাহারাওয়ালার চোখে না পড়ে।
ঢাকেশ্বরী মন্দিরের পুকুরে পুণ্যার্থীরা স্নান সারতে আসেন নিয়মিত। পুণ্য লাভের আশায় না হোক, গরম থেকে বাঁচতে চাইলে তাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন আপনিও। কদমতলা-রাজারবাগের শ্রীশ্রীবরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দিরে রয়েছে গঙ্গাসাগর দিঘি। এই দিঘিটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বিশাল। দেখতে খুবই মনোরম। বহু লোক প্রতিদিন এখানে আসে গোসল সারতে। সবুজবাগের ধর্মরাজিক বৌদ্ধবিহারের পুকুরও উন্মুক্ত রয়েছে সাধারণ মানুষের জন্য। এখানে চাইলে যে কেউ এসে সকাল-সন্ধ্যা সাঁতার কাটতে পারবে। পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলী-ইসলামপুরের নবাববাড়ির পুকুরে নামতে হলে অবশ্য কিছু টাকা খরচ করতে হবে। মাত্র তিন টাকাতেই মেলে এখানে গোসল করার অনুমতি। তবে এই পুকুরে গোসলের সময় কোনও ধরনের সাবান ব্যবহার করা যায় না।
পুরান ঢাকার বংশাল পুকুরে রয়েছে সিঁড়িসহ দুটি ঘাট। বংশালের পুকুরটি ছয় বিঘা জমির ওপর কাটা। ১৮৪০ সালের আগে এলাকাবাসীর পানি সমস্যা সমাধানের জন্য বংশালের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ও জমিদার হাজি বদরুদ্দীন ভুট্টো নিজ জমিতে খনন করেন এ পুকুর। এ কারণে পুকুরটি ভুট্টো হাজির পুকুর হিসাবেও পরিচিত। প্রায় ৪শ ফুট লম্বা ও ২শ ৫০ ফুট চওড়া এ পুকুরটির গভীরতা ৩০ থেকে ৪০ ফুট। পুকুরটির চারদিকে পাকা বেষ্টনী ও রাস্তা। রাস্তার পাশ ধরে পুকুরের চারদিকে সারিবদ্ধভাবে লাগানো আছে নারকেল গাছসহ অন্যান্য গাছ। টলটলে স্বচ্ছ পানিতে এসব গাছের ছায়া সৃষ্টি করে নৈসর্গিক সৌন্দর্য। পুকুরটির চারদিকেই লোহার গ্রিল দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে নিরাপত্তা বেষ্টনী, যাতে কোনও শিশু পানিতে না পড়ে যায়। পুকুরটির উত্তর ও দণি পাশে রয়েছে দুটি শান বাঁধানো ঘাট। ঘাট দুটির প্রবেশপথে আছে লোহার গেট আর ওপরে ছাউনি। উত্তর পাশের ঘাটটি ব্যবহার করেন বংশালে বসবাসরত ঢাকার স্থানীয় বাসিন্দারা, আর দণি পাশের ঘাটটি বাইরের লোকের জন্য। এজন্য এ পাশের ঘাটে বসানো হয়েছে টোল ব্যবস্থা। প্রতিবার গোসলের জন্য প্রত্যেককে দিতে হয় দুটাকা। দণি ঘাটের পাশেই পুকুরের পানিতে বসানো হয়েছে পানির পাম্প। তার ওপরে পাকা পাটাতনের ওপর আছে পানির ট্যাঙ্ক। পাম্পে তোলা এ পানি এলাকাবাসী ব্যবহার করছে খাবার ও রান্নাবান্নার কাজে।
পুকুরটি নিয়ে ভুট্টো হাজিরই বংশধর ও ঘাটের টোল আদায়কারী মোজাফফর হোসেন বলেন, এই দণি ঘাটেই প্রতিদিন ১ হাজার ২শ থেকে ১ হাজার ৫শ লোক গোসল করে। সে হিসাবে দুঘাটে প্রতিদিন প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার লোক গোসল করছে। তিনি আরও বলেন, পুরান ঢাকাসহ এ নগরীতেই এক সময় আরও অনেক বড় পুকুর বা দিঘি ছিল, বর্তমানে সেগুলোর কোনও অস্তিত্ব নেই, বিলীন হয়ে গেছে রণাবেণের অভাবে।

নওয়াব আবদুল বারীর পুকুর
আহসান মঞ্জিল পরিবারের নওয়াব আবদুল বারীর খননকৃত বিশাল পুকুর। সময়টা ১৮৩৮ সাল। প্রায় ১৭১ বছরের পুরনো ইতিহাস। আর অনেক উত্থান-পতনের সাী এই গোল তালাব বা গোল পুকুর। বড় বড় বিল্ডিংয়ের ঘেরাটোপে একখ- কোমল স্নিগ্ধতা এই পুকুর। অনেক চড়াই-উত্তরাই পেরিয়ে আজ এই পুকুর পরিচালিত হচ্ছে মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানে। এই ট্রাস্ট পরিচালিত হচ্ছে নওয়াব পরিবারেরই বংশধর, স্থানীয় মুরব্বিদের দ্বারা। এখানে গোসলের ব্যবস্থা আছে কিন্তু কাপড় কাঁচা, সাবান ব্যবহার করা নিষেধ। মৌলভি খাজা আবদুল্লাহ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই প্রতিবছর এই পুকুর পাড় ঘিরে আয়োজিত হয় মীনা বাজার, মেলা, মাছ ধরা প্রতিযোগিতা। আর প্রতিদিন বিকালের আড্ডা তো আছেই।

৪টি খাল নিশ্চিহ্ন, ১৩টি থেকেও নেই
ঢাকা শহরের জলাবদ্ধতার মূল কারণ অবৈধভাবে খাল দখল ও ভরাট করা। স্বাধীনতার আগে এ শহরে ৪৭টি খাল ছিল। বেশিরভাগ খালের প্রস্থ ছিল ১৫০ ফুটের বেশি। খালপথে নগরের পানি নিষ্কাশিত হতো। স্বাধীনতার পর মাত্র তিন যুগের ব্যবধানে ঢাকা মহানগর এলাকার ২৫টি খাল বিলুপ্ত হয়ে গেছে। ২২টি খালের অস্তিত্ব থাকলেও সেগুলো ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। শাহবাগ থেকে মগবাজার পর্যন্ত খাল ছিল, ঢাকা ওয়াসার মানচিত্রে এর নাম পরীবাগ খাল। তবে সেখানে এখন খালের কোনও চিহ্ন নেই, খালটি এখন সোনারগাঁও সড়ক। পরীবাগ খালের মতোই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঢাকার অবশিষ্ট খালগুলো। রাজধানীর পানি খালগুলো দিয়েই বুড়িগঙ্গাসহ আশপাশের নদীতে গিয়ে পড়ছে। খালগুলো বেদখল হওয়ায় পানি আটকে প্রতিবছরই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা, যা দুর্ভোগে ফেলে নগরবাসীকে। বর্তমানে পরীবাগ, রায়েরবাজার, আরামবাগ ও গোপীবাগ এ চারটি খালের কোনও অস্তিত্বই নেই।
প্রায় এক যুগ আগে শাহবাগ থেকে উৎপত্তি হয়ে বড় মগবাজার পর্যন্ত পরীবাগ খাল, কাটাসুর খাল হতে উৎপত্তি হয়ে সরাইজাফরাবাদ ও সুলতানগঞ্জ মৌজার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রায়েরবাজারের বেড়িবাঁধ পর্যন্ত রায়েরবাজার খাল, বিজয়নগর পানির ট্যাঙ্ক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত আরামবাগ খাল এবং গোপীবাগ থেকে উৎপত্তি হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেছন দিয়ে আরামবাগ খাল পর্যন্ত গোপীবাগ খাল ছিল। নগর কর্তৃপরে সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সময়ের ব্যবধানে খালগুলো সড়কে পরিণত হয়েছে।
রাজাবাজার খাল, ধোলাইখাল-১, ধোলাইখাল-২, শাহজাহানপুর খাল, গুলশান-বনানী খাল, ধানমন্ডি খাল, দণিগাঁও-নন্দীপাড়া খাল, রাজারবাগ-নন্দীপাড়া খাল, নাসিরাবাদ-নন্দীপাড়া খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খাল, ডুমনি খাল, বাউখার খাল এবং গোবিন্দপুর খালÑ এ ১৩টি খাল থেকেও নেই! এর মধ্যে রাজাবাজার খাল (রাজাবাজার পশ্চিম পাশ থেকে হোটেল সুন্দরবন পর্যন্ত), ধোলাইখাল-১ (দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু থেকে ধোলাইখাল-২ পর্যন্ত), ধোলাইখাল-২ (বুড়িগঙ্গা নদী থেকে সূত্রাপুর, গে-ারিয়া, দয়াগঞ্জ, ওয়ারী শহর ঢাকা মৌজা (পুরান) হয়ে দয়াগঞ্জ বাজার পর্যন্ত, ধানমন্ডি খাল, নন্দীপাড়া-ত্রিমোহনী খালে বক্স কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।
ঠিকমতো দেখভাল না হওয়ায় বাকি খাল সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। ফলে পানি প্রবাহে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা শহরের খালগুলো ধ্বংসের একটি বড় কারণ ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠী ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর পরিবেশ বিষয়ে উদাসীনতা। সরু বক্স কালভার্ট, সড়ক ও ভবন নির্মাণসহ বিভিন্নভাবে বন্ধ করা হয়েছে খাল। এসব কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগিতা বা আর্থিক জোগান দিয়েছে ঋণপ্রদানকারী গোষ্ঠী। উন্নয়নের নামে খাল ভরাট করে নর্দমায় রূপান্তর কার্যক্রমের মাধ্যমে পরিবেশ আইন ১৯৯৫, পরিবেশ নীতিমালা, বেঙ্গল ক্যানেল অ্যাক্ট ১৮৬৪ ও জলাধার সংরণ আইন লঙ্ঘন করা হচ্ছে। জলাশয়বিহীন রাজধানী জনজীবনের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। দেখা দেবে ভূমিকম্প, জীববৈচিত্র্য হবে তিগ্রস্ত। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশসঙ্কটের আশঙ্কা করছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা যা শুধু পরিবেশ নয়, অর্থনীতির জন্যও নেতিবাচক পরিণতি ডেকে আনবে।

Tuesday, January 18, 2011

বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে

যেভাবে বেঁচে আছি:

বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে

| তারিখ: ১৬-০১-২০১১


বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে—বহু বছর ধরেই নগরজীবনে চলে আসছে এ দ্বৈরথ। জানুয়ারি মাসে বাড়িভাড়া বাড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই বেশ জমে ওঠে। ভাড়াটে বাড়তি ভাড়া দিতে হিমশিম খেয়ে যান। এ নিয়ে বাড়িওয়ালাদের কোনো বিকার নেই। ঊর্ধ্বগতির বাজারে বাড়িভাড়া বাড়ানোর নানা যুক্তি নিয়ে বসে থাকেন তাঁরা। নগরের তিনজন ভাড়াটে আর একজন বাড়িওয়ালার পাঠানো চিঠিতে উঠে এসেছে তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা।

বাড়িওয়ালাদের অন্যায় দাবি
কোনো একসময় মানুষ তাঁর এক-তৃতীয়াংশ আয় দিয়ে আবাসন নিশ্চিত করতে পারলেও এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে তা অনেকটাই কঠিন। রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকার বাড়িওয়ালারা প্রতিবছর জানুয়ারি মাস থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ ভাড়া দাবি করেন। মাত্র তিন বছর আগে যে বাসার ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার টাকা, তা এখন প্রায় নয় হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে। অথচ এই অনুপাতে সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। বাসা ভাড়ার টাকা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বাড়িওয়ালারা ধরে নিয়েছেন, বাড়ি থাকলে ভাড়াটের অভাব হবে না। আবার বারবার বাসা বদলের বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে অনেক ভাড়াটে বাড়িওয়ালার কথাই মেনে নিচ্ছেন।
বছরের পর বছর এভাবে মাত্রাতিরিক্ত হারে বাসা ভাড়া বাড়ানো চলতে থাকলে আমাদের মতো যারা একবুক আশা নিয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করতে আসে, তাদের হয়তো নিদারুণ অর্থকষ্ট মেনে নিতে হবে। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। না হলে সরকার মানুষের বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে।
রাহুল বারুরী রিপন
সিএসই প্রথম বর্ষ, ঢাকা সিটি কলেজ

‘বাড়িভাড়া লাগামহীন ভাড়াটেদের খবর নিন’
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যখন-তখন বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করা বর্তমানে বাড়িওয়ালাদের অন্যতম নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত বাড়িভাড়ার ফলে স্বল্প আয়ের লোকজনকে নগরে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী লোকজনকে তাঁদের আয়ের সিংহভাগ শুধু বাড়িভাড়ায় ব্যয় করতে হয়। এতে জীবনের অন্যান্য ব্যয়নির্বাহ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। বছর বছর বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ছাড়াও অনেক বাড়িওয়ালা বছরে একাধিকবার বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। বাড়ির মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির পরিমাণ অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক হওয়ার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না। ঝগড়া-বিবাদ ও মনোমালিন্য লেগেই থাকে। ব্যাপক হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করলে সব বাড়ির মালিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। আর সেই ভাড়াটে যেন ওই এলাকায় আর কোনো বাড়িতে উঠতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করেন। ভাড়াটেদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখনই প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণহীন বাড়িভাড়াবিরোধী নাগরিক আন্দোলন জোরদার করা। বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটেদের ওপর মানসিক নির্যাতন এবং অগ্রিমের নামে ইচ্ছেমতো জামানত আদায়ের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
হোসাইন মুহাম্মদ ইফতেখারুল হক
সাধারণ সম্পাদক
আল-হেরা কনসোর্টিয়াম, বাংলামোটর, ঢাকা

ভাড়া বাড়ানোর লাল সংকেত!
রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ বাসিন্দার নিজস্ব বাড়ি না থাকায় তাঁদের ভাড়া করা বাসায় বসবাস করতে হয়। এই ভাড়া মেটাতে গিয়ে তাঁদের অর্জিত আয়ের একটি বড় অংশ দিয়ে দিতে হয় বাড়িওয়ালাদের। ফলে অন্যান্য খাতের খরচ মেটাতে টানাটানিতে পড়েন অনেকেই। আবার বাড়িওয়ালারাও বছরের শুরুতে ইচ্ছেমতো ভাড়ার অঙ্ক বাড়িয়ে চলছেন। বাসস্থানসংকটের কারণে তা মেনেও নিচ্ছেন নিরুপায় ভাড়াটেরা। কয়েকবার বাড়িভাড়া কমানোর জন্য দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। ফলে ভাড়াটেরা শিকার হচ্ছেন বর্ধিত ভাড়ার। এ বছর জানুয়ারি মাস আসার আগেই ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়ানোর লাল সংকেতও দিয়ে রেখেছেন। আমি নিজেও ওই সংকেতের বাইরে নই। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ভাড়াটেদের ভোগান্তি দূর করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মো. আলী আহমেদ
হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ
সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা

আমাদের কথাও ভাবুন
কিছুদিন আগে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ভাড়াটেদের একটি সংগঠন সমাবেশ করে। সমাবেশে বাড়িভাড়া প্রসঙ্গে ভাড়াটেরা নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে বাড়ি ভাড়াকে একটি আইনানুগ নিয়মের অধীনে আনার কথা বলেন বক্তারা।
একজন বাড়িওয়ালা হিসেবে আমি আমার নিজের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণগুলো তুলে ধরছি। পুরান ঢাকায় একটি মাঝারি মানের ফ্ল্যাট বানাতে খরচ অন্তত ১০ লাখ টাকা। সেটি তৈরি হওয়ার পর প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া হলে বাড়িওয়ালার লগ্নি টাকা উঠে আসতে সময় লাগে পাঁচ-ছয় বছর। এ ছাড়া ফ্ল্যাটের নানা রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কিছু অর্থ খরচ করতে হয়। দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া কিছুটা না বাড়ালে বাড়িওয়ালাদের গতি থাকে না। আবার সরকার প্রতি অর্থবছরের বাজেটে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের খুশি রাখতেও কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এসবের বিল মিটিয়ে বাড়িওয়ালার হাতে খুব বেশি টাকা থাকে না।
অনেক বাসায় ভাড়াটে নিজ নিজ বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ করেন। সেখানে দুষ্ট প্রকৃতির ও চতুর ভাড়াটে অনেক বিল জমিয়ে সরে পড়েন। অন্যদিকে বাড়ির পৌরকর, খাজনা ইত্যাদি পরিশোধ করতেও জায়গায় জায়গায় উৎকোচ দিতে হয়। তাই বলা যায়, সব বাড়িওয়ালা অযৌক্তিক ভাড়া নেন না। আবার কিছু বাড়িওয়ালা সত্যিই অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ান। এটা বন্ধ করা দরকার। গুটিকয়েক বাড়িওয়ালার অসাধুতার দায়ভার সব বাড়িওয়ালা কেন নেবেন?
আর ভাড়াটেরাও সব ক্ষেত্রে সঠিক আচরণ করেন না। অনেক ভাড়াটে দরকার ছাড়াই পানির কল ছেড়ে কিংবা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বেলে রাখেন। আবার কোনো কোনো ভাড়াটে বাড়ি ভাড়ার সময় দু-তিন সদস্যের নির্ঝঞ্ঝাট পরিবারের কথা বলে বাসায় তোলেন তারও বেশি সদস্য।
বাড়িওয়ালাকে মূর্তিমান আতঙ্ক না ভেবে সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের সম্পর্ক সুদৃঢ় করা যায়। আর ভাড়াটেরা সরকারিভাবে যে আইন প্রণয়নের কথা বলছেন, সেটি প্রণয়ন করা হোক। কিন্তু আইনে যেন উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়।
মোহাম্মদ হানিফ
১ গোয়ালঘাট, ঢাকা
Source: Daily Prothom-alo

রাতের রাজপথ বাসের দখলে

রাতের রাজপথ বাসের দখলে

রাতের রাস্তায় এভাবেই রাখা হয় সারি সারি বাস ফয়সাল সিদ্দিক কাব্য
জহিরুল আলম পিলু
যে রাজধানী নগরী সারাদিন অসংখ্য বাস আর যানবাহনের ভিড়ে ত্রাহিদশা, সেই নগরীই সব কোলাহল শেষে রাত ১২টার পর প্রায় নির্জন হয়ে পড়ে । অসংখ্য বাস চলে দিনভর, কিন্তু বাসগুলোর মালিকরা কি কোনো গ্যারেজ বা বাস রাখার স্থান সংরক্ষিত করেছেন? সম্ভবত না। তাহলে ঢাকার রাজপথ থেকে মহল্লার অলিগলির রাস্তা কেন রাতের বেলা চলে যাবে এসব বাসের দখলে।এখন প্রশ্ন হলো_ এসব বাস কোম্পানির বাস রাখার নিজস্ব বা নির্দিষ্ট কোনো স্থান কেন থাকবে না। ঢাকা শহরে ব্যক্তিমালিকানাধীন বাস পরিচালনার জন্য আধুনিক সুবিধা সংবলিত একাধিক বাস টার্মিনাল থাকলেও শহরের তেজগাঁও প্রগতি সরণি, ফুলবাড়িয়া, গুলিস্তান, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল এমনকি নির্দিষ্ট টার্মিনালগুলোর বাইরের রাস্তাগুলোসহ বিভিন্ন স্থানে সারারাত রাস্তার ওপর পার্কিং করতে দেখা যায় অসংখ্য বাস। সরেজমিনে দেখা যায়, সারারাত কমলাপুর থেকে শাহজাহানপুর রোডে সোহাগ, তিশা, তিতাস, রাহবার ৬নং নটর ডেম কলেজের আশপাশে শ্যামলী, হানিফ, ঈগল পরিবহনসহ বিভিন্ন সার্ভিসের বাস, অন্যদিকে তেজগাঁও, গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, সায়েদাবাদের রাস্তাগুলোতে নামিদামি কোম্পানি সৌদিয়া, স্কাইলাইন, হানিফ, বলাকা পরিবহনসহ বিভিন্ন সার্ভিসের বাসের দখলে চলে যায়।
এসব স্থানে বিভিন্ন অবৈধ কার্যকলাপের আস্তানাও বটে। সরেজমিনে দেখা যায়, কমলাপুর-শাহজাহানপুর রাস্তার উভয় পাশে এবং এর আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাসের আড়ালে চলে গাঁজা বিক্রি, সেবন, ছিনতাই এমনকি দেহ ব্যবসা। কমলাপুর-শাহজাহানপুর রাস্তার ডানপাশ দিয়ে এগিয়ে দেখা যায়, ফুটপাতের ওপর চাদর ও ছালা দিয়ে তৈরি ২-৩টি ছাউনি। বাসের আড়াল ও রাস্তার বাতিগুলো অকেজো হওয়ায় এই ছাউনিগুলোর ভেতরে সারারাত চলে দেহ ব্যবসা। রাজা নামক এক সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে চলে এখানকার অবৈধ কার্যক্রম। মিরপুর ১৪ নম্বর চাইনিজ রেস্টুরেন্টের পাশেই মিরপুর-গুলিস্থান রুটের ১৪ নম্বর বাসের ভেতরই চলে অভিনব উপায়ে দেহ ব্যবসা। সামনের দুই সিট একসঙ্গে করে কয়েল জালিয়ে ঘুমের ভান করে পুলিশ ও পথচারীর দৃষ্টি সরিয়ে রাখে, তৎপর একাধিক হ্যান্ডশেক পার্টি ।
গুলিস্তানে দোকানদাররা জানান, রাত হলেই এখানে বাসের আড়ালে ও আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকে বিভিন্ন ছিনতাইকারী, চোর ও মাদক ব্যবসায়ী এবং সেবনকারীরা; কিন্তু দেখে বোঝা যাবে না এরা ছিনতাইকারী, না বাসের স্টাফ। কিছুদিন আগে এক পথচারীর ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। আর মোবাইল চুরি তো আছেই। এ ব্যাপারে এক পুলিশ সদস্য জানান, আমাদের উপস্থিতিতে কোনো কিছু হয় না।
ঢাকা শহরের সরকারি মালিকানাধীন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সংস্থা, মতিঝিল, মোহাম্মদপুর, গুলিস্তান, কল্যাণপুরসহ ৭টি বাস ডিপো বা টার্মিনাল রয়েছে। এসব ডিপোর কাছে বিভিন্ন বেসরকারি কাউন্টার বা টার্মিনাল গড়ে ওঠায় বিপাকে পড়েছেন এর কর্মকর্তারা। সেই সঙ্গে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীসাধারণের। সরেজমিনে দেখা যায়, মতিঝিল বিআরটিসি বাস ডিপো একটি আন্তর্জাতিক ডিপো হলেও বেসরকারি বাসগুলো দিনরাত পার্কিংয়ের কারণে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের হয়রানি হতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে মতিঝিল ডিপোর ঊর্ধ্বতন একজন ট্রাফিক কর্মকর্তা জানান, এসব সমস্যা দূরীকরণের লক্ষ্যে আমরা ২০০৭ সাল ও গত ১৪ জুলাই এসব বাস সার্ভিসের কাউন্টারগুলো অপসারণের জন্য উপ-পুলিশ কমিশনার ট্রাফিক (পূর্ব) ডিএমপি বরাবর আবেদন করেও কোনো ফলাফল এখনো পাইনি।
বিভিন্ন বাস সার্ভিস কোম্পানির কর্মকর্তারা রাতে রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা সম্পূর্ণ অন্যায় স্বীকার করে বলেন, পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হচ্ছে। কয়েকটি নামিদামি কোম্পানির কর্মকর্তারা আরও জানান, আমাদের দামি বাসগুলোও ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় রাখতে হচ্ছে। ফলে মাদকসেবীরা বাসের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। তারাও চান ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন একটি নির্দিষ্ট স্থান করে দেন। জানা যায়, এসব বাস কোম্পানি রাস্তায় বাস পার্কিংয়ের জন্য প্রশাসনকে মোটা অঙ্কের অর্থ দিয়ে থাকে। চুরি-ছিনতাই রোধ, রাতে যাত্রীদের চলাচলে নিরাপত্তা ও সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাস্তা থেকে এসব অনুমোদনবিহীন টার্মিনাল অপসারণ করা হবে বলে প্রিয় ঢাকাবাসীর প্রত্যাশা।
Source: Daily Samakal

রূপবদলের ঢাকা

রূপবদলের ঢাকা


ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা মতিঝিল শুক্রবারে প্রায় জনমানবশূন্য রাজিব পাল
প্রতিনিয়ত বদলায় ঢাকার রঙ। সি্নগ্ধ ভোরের ঢাকা, যানজটে অচল মধ্যদুপুর, সন্ধ্যায় ক্লান্ত মানুষের ঘরে ফেরার উৎসব আর প্রহরীর হুশিয়ারি নিয়ে রাতের রঙিন ঢাকা। রোব ও বৃহস্পতিবারের ঢাকা সত্যিকার অর্থেই অন্য যে কোনো দিনের থেকে আলাদা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের অন্যরকম এক চাঞ্চল্য ঢাকাকে করে বৈচিত্র্যময়। আকাশের রঙের মতোই ঢাকার মন বোঝা দায়। এ নিয়ে প্রধান প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন আর ডি বিপ্লব
প্রতিনিয়ত বদলায় ঢাকার রঙ। সি্নগ্ধ ভোরের ঢাকা, যানজটে অচল মধ্যদুপুর, সন্ধ্যায় ক্লান্ত মানুষের ঘরে ফেরার উৎসব আর প্রহরীর হুশিয়ারি নিয়ে রাতের রঙিন ঢাকা। ঈদে ঘরমুখো মানুষের অন্যরকম এক চাঞ্চল্য ঢাকাকে করে বৈচিত্র্যময়। আকাশের রঙের মতোই ঢাকার মন বোঝা দায়। গ্রীষ্মের খরতাপে পথের মোড়ে মোড়ে আখের রস অথবা কোমল পানীয়ের দোকানে ভিড়। এক বর্ষা থেকে আরেক বর্ষায় রাস্তার কাদামাখা হাঁটুপানিতে পথশিশুদের উৎসব, সুযোগসন্ধানী রিকশা-সিএনজিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য, শীতের সকালে অলিগলিতে ভাসমান ভাপা পিঠার দোকান, ঢাকার চিরচেনা গল্প। প্রায় বিশ মিলিয়ন লোকের এ জনপদে দিনের গল্পের প্রায় পুরোটাই ট্রাফিক জ্যাম, ব্যস্ত মানুষের ছোটাছুটি। কারও যেন কোনোদিকে তাকানোর অবকাশ নেই। সেই ভোরে, পাখির কলরব শুরু হওয়ার আগেই অভিজাত আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা ছোটেন প্রাতঃভ্রমণে। দলে দলে মানুষ ঘর থেকে বেরোয় কাজের সন্ধানে। চোখে পড়ে সেলাই দিদিমণিদের দীর্ঘ পথচলা। সূর্য যখন মাথার উপর স্থির হয়, ঢাকাও তখন স্থির হয়ে যায় জ্যামের কল্যাণে।
অফিস শুরু ও ছুটির সময়টায় বাস, সিএনজি, রিকশা এক কথায় তীব্র যান সংকট। লোকাল বাসগুলো তখন সিটিং সার্ভিসে রূপ নেয়। ফার্মগেট, মতিঝিল, গুলিস্তান, গুলশান-১ ও ২সহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় বাস কাউন্টারের সামনে টিকিট হাতে নারী-পুরুষের দীর্ঘ লাইন শুধু ঢাকাতেই চোখে পড়ে।
রাতের রঙিন ঢাকা, ঢাকার অন্য এক রূপ। চৌরাস্তার উঁচু ল্যাম্পপোস্ট, শাহবাগ, টিএসসির মোড়, কবি আর কবিতায় মুখরিত আড্ডা, কারওয়ান বাজারে ভ্যান কিংবা বাঁশের টুকরির মধ্যে বড় ক্লান্ত মানুষের সুখনিদ্রা; কমলাপুর, তেজগাঁও, টঙ্গী রেলস্টেশনে ভাসমান মানুষের ভিড় আর অভিজাত হোটেল, মোটেল, ক্লাব, পার্টি হাউসে জমকালো ফ্যাশন শো, ডিজে পার্টি, রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা ফুটপাতের স্টিলের ওভারব্রিজে নিশিকন্যাদের করুণ বাস্তবতা, ভাঙা মন নিয়ে ওয়াসা, ডিপিডিসি, ডিসিসির শ্রমিকদের রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, সর্বাধুনিক ব্যাংকিং এটিএম বুথের পাশে ঢুলুঢুলু চোখে জীর্ণ প্রহরী, আইকা গাম-মই নিয়ে একদল শিশুর দেয়াললিখন আর পোস্টারে নগর ছেয়ে ফেলার শপথ, এর ফাঁকে ফাঁকে নেশার আড্ডা, থানার সেল কিংবা অজ্ঞাত কোনো স্থান থেকে ভেসে আসা বুলেটের শব্দে অবুঝ শিশুর ঘুম ভেঙে যায়। কিছুতেই শিশুটির কান্না থামে না। সারারাত তাকে বুকে নিয়ে অজানা আতঙ্কে মায়ের নির্ঘুম রাত, ভোরের অনন্ত অপেক্ষা। অপেক্ষা রেকর্ডিং স্টুডিও ক্রুর কখন ভোর হবে, ওঁৎ পেতে থাকা কোনো অশুভ চক্রের অপেক্ষা, মানুষ বড় চালাক হয়ে গেছে_ পকেটে দামি মোবাইলও রাখে না, খরচের টাকা ছাড়া কোনো টাকাও থাকে না।
রোববার ও বৃহস্পতিবারের ঢাকা সত্যিকার অর্থেই একটু আলাদা। ঢাকার আশপাশে যাদের বাড়ি, সপ্তাহজুড়েই তাদের অপেক্ষা এ সময়ে ছুটে যাবেন নাড়ির টানে। প্রিয়জনের মুখ এক পলকের জন্য দেখতে অস্থির হয়ে ওঠে কর্মব্যস্ত মানুষ। কোনো সন্দেহ নেই বৃহস্পতিবারের শেষ বেলাটুকু যেন শেষ হতে চায় না তাদের। অফিস শেষে ছুটে যান কাছের কোনো মার্কেটে। কেনাকাটার সময় দোকানির সার্ভিসকে পৃথিবীর সবচেয়ে ধীরগতির অলস সার্ভিস বলে তাদের মনে হয়। অন্যান্য দিনের তুলনায় এদিন যানবাহনে চাপ পড়ে সবচেয়ে বেশি। একটু অন্য চোখে তাকালেই দেখা যায়, এদিন ঢাকায় ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেকাংশে। মানুষের টানটান উত্তেজনা আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় প্রায়ই। একই চিত্র রোববারেও। পার্থক্য শুধু বৃহস্পতিবারের বিকেলের দৃশ্য রোববারের সকালে প্রভাব পড়ে। শুরু হয় আরও একটি সপ্তাহের সূর্যোদয়। শুক্রবারের ঢাকা প্রায় পুরোটাই ফাঁকা। এদিন রিকশা, সিএনজি, বাস মেলে অনায়াসেই। লাইনে ঘেমে গোসল করতে হয় না, সিএনজি-রিকশা যেখানেই বলি না কেন যেতে চায় এক কথায়ই, বাড়তি ভাড়া তো দূরে থাক ন্যায্য ভাড়া থেকে কিছু কমেও ওরা যেতে চায়। কিন্তু যাবটা কোথায়, অলস সময় কাটানোই যে আজ বড় কাজ! রিকশাওয়ালাদের শুক্রবার মানেই ঈদের দিন। কারণ ওইদিন মহাজনকে কোনো জমা দিতে হয় না। আক্ষেপের সুরে কেউ কেউ বলেন_ আহ, এমন যদি প্রতিদিনের ঢাকা হতো! বিকেলে ওয়ান্ডার ল্যান্ড, শিশুপার্ক, চিড়িয়াখানা, লালবাগ কেল্লা, সংসদ ভবন, নন্দন কিংবা ফ্যান্টাসি কিংডমে মানুষের জোয়ার।
এছাড়াও রোজা এলেই বাড়তি কিছু রোজগারের আসায় দলে দলে মানুষ ঠাঁই নেয় প্রিয় ঢাকার বুকে। বিশ্ব ইজতেমায়, আন্তর্জাতিক কোনো ক্রিকেট অথবা আর্মি স্টেডিয়ামে ওপেন এয়ার কনসার্টে ঢাকার বাইরে থেকে ছুটে আসে লাখো মানুষ। এছাড়া বিভিন্ন অফিসিয়াল কাজ, হাসপাতাল ও অন্যান্য কাজে ঢাকায় আসা-যাওয়া করে এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। সবকিছুর পরও ঢাকার ক্রমাগত রূপবদল আমাদের মুগ্ধ
করে নিঃসন্দেহে।