Pages

Search This Blog

Tuesday, January 18, 2011

বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে

যেভাবে বেঁচে আছি:

বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে

| তারিখ: ১৬-০১-২০১১


বাড়িওয়ালা বনাম ভাড়াটে—বহু বছর ধরেই নগরজীবনে চলে আসছে এ দ্বৈরথ। জানুয়ারি মাসে বাড়িভাড়া বাড়ানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই বেশ জমে ওঠে। ভাড়াটে বাড়তি ভাড়া দিতে হিমশিম খেয়ে যান। এ নিয়ে বাড়িওয়ালাদের কোনো বিকার নেই। ঊর্ধ্বগতির বাজারে বাড়িভাড়া বাড়ানোর নানা যুক্তি নিয়ে বসে থাকেন তাঁরা। নগরের তিনজন ভাড়াটে আর একজন বাড়িওয়ালার পাঠানো চিঠিতে উঠে এসেছে তাঁদের দাবিদাওয়ার কথা।

বাড়িওয়ালাদের অন্যায় দাবি
কোনো একসময় মানুষ তাঁর এক-তৃতীয়াংশ আয় দিয়ে আবাসন নিশ্চিত করতে পারলেও এখন সাধারণ মানুষের পক্ষে তা অনেকটাই কঠিন। রাজধানী ঢাকার প্রায় সব এলাকার বাড়িওয়ালারা প্রতিবছর জানুয়ারি মাস থেকে নানা অজুহাত দেখিয়ে অতিরিক্ত ২০ শতাংশ ভাড়া দাবি করেন। মাত্র তিন বছর আগে যে বাসার ভাড়া ছিল পাঁচ হাজার টাকা, তা এখন প্রায় নয় হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে। অথচ এই অনুপাতে সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। বাসা ভাড়ার টাকা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাঁদের। ভাড়া বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। বাড়িওয়ালারা ধরে নিয়েছেন, বাড়ি থাকলে ভাড়াটের অভাব হবে না। আবার বারবার বাসা বদলের বিড়ম্বনা থেকে রক্ষা পেতে অনেক ভাড়াটে বাড়িওয়ালার কথাই মেনে নিচ্ছেন।
বছরের পর বছর এভাবে মাত্রাতিরিক্ত হারে বাসা ভাড়া বাড়ানো চলতে থাকলে আমাদের মতো যারা একবুক আশা নিয়ে ঢাকায় পড়াশোনা করতে আসে, তাদের হয়তো নিদারুণ অর্থকষ্ট মেনে নিতে হবে। এ অবস্থায় সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে মনে করি। না হলে সরকার মানুষের বাসস্থানের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হবে।
রাহুল বারুরী রিপন
সিএসই প্রথম বর্ষ, ঢাকা সিটি কলেজ

‘বাড়িভাড়া লাগামহীন ভাড়াটেদের খবর নিন’
নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যখন-তখন বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করা বর্তমানে বাড়িওয়ালাদের অন্যতম নিয়মে পরিণত হয়েছে। অনিয়ন্ত্রিত বাড়িভাড়ার ফলে স্বল্প আয়ের লোকজনকে নগরে দুর্বিষহ জীবন যাপন করতে হচ্ছে। চাকরিজীবী ও শ্রমজীবী লোকজনকে তাঁদের আয়ের সিংহভাগ শুধু বাড়িভাড়ায় ব্যয় করতে হয়। এতে জীবনের অন্যান্য ব্যয়নির্বাহ করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। বছর বছর বাড়িভাড়া বৃদ্ধি ছাড়াও অনেক বাড়িওয়ালা বছরে একাধিকবার বাড়িভাড়া বৃদ্ধি করে থাকেন। বাড়ির মালিকদের ভাড়া বৃদ্ধির পরিমাণ অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক হওয়ার কারণে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের মধ্যে সুসম্পর্ক থাকে না। ঝগড়া-বিবাদ ও মনোমালিন্য লেগেই থাকে। ব্যাপক হারে বাড়িভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদ করলে সব বাড়ির মালিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। আর সেই ভাড়াটে যেন ওই এলাকায় আর কোনো বাড়িতে উঠতে না পারেন, তার ব্যবস্থা করেন। ভাড়াটেদের এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য এখনই প্রয়োজন নিয়ন্ত্রণহীন বাড়িভাড়াবিরোধী নাগরিক আন্দোলন জোরদার করা। বাড়িওয়ালা কর্তৃক ভাড়াটেদের ওপর মানসিক নির্যাতন এবং অগ্রিমের নামে ইচ্ছেমতো জামানত আদায়ের দুর্বিষহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
হোসাইন মুহাম্মদ ইফতেখারুল হক
সাধারণ সম্পাদক
আল-হেরা কনসোর্টিয়াম, বাংলামোটর, ঢাকা

ভাড়া বাড়ানোর লাল সংকেত!
রাজধানী ঢাকার বেশির ভাগ বাসিন্দার নিজস্ব বাড়ি না থাকায় তাঁদের ভাড়া করা বাসায় বসবাস করতে হয়। এই ভাড়া মেটাতে গিয়ে তাঁদের অর্জিত আয়ের একটি বড় অংশ দিয়ে দিতে হয় বাড়িওয়ালাদের। ফলে অন্যান্য খাতের খরচ মেটাতে টানাটানিতে পড়েন অনেকেই। আবার বাড়িওয়ালারাও বছরের শুরুতে ইচ্ছেমতো ভাড়ার অঙ্ক বাড়িয়ে চলছেন। বাসস্থানসংকটের কারণে তা মেনেও নিচ্ছেন নিরুপায় ভাড়াটেরা। কয়েকবার বাড়িভাড়া কমানোর জন্য দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন হলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেউ। ফলে ভাড়াটেরা শিকার হচ্ছেন বর্ধিত ভাড়ার। এ বছর জানুয়ারি মাস আসার আগেই ঢাকা শহরের বাড়িওয়ালারা ভাড়া বাড়ানোর লাল সংকেতও দিয়ে রেখেছেন। আমি নিজেও ওই সংকেতের বাইরে নই। বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ঢাকা শহরের ভাড়াটেদের ভোগান্তি দূর করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মো. আলী আহমেদ
হিসাববিজ্ঞান বিভাগ, দ্বিতীয় বর্ষ
সরকারি বাঙলা কলেজ, ঢাকা

আমাদের কথাও ভাবুন
কিছুদিন আগে ভিক্টোরিয়া পার্ক এলাকায় ভাড়াটেদের একটি সংগঠন সমাবেশ করে। সমাবেশে বাড়িভাড়া প্রসঙ্গে ভাড়াটেরা নিজ নিজ বক্তব্য তুলে ধরেন। সেখানে বাড়ি ভাড়াকে একটি আইনানুগ নিয়মের অধীনে আনার কথা বলেন বক্তারা।
একজন বাড়িওয়ালা হিসেবে আমি আমার নিজের বাড়িভাড়া বৃদ্ধির যৌক্তিক কারণগুলো তুলে ধরছি। পুরান ঢাকায় একটি মাঝারি মানের ফ্ল্যাট বানাতে খরচ অন্তত ১০ লাখ টাকা। সেটি তৈরি হওয়ার পর প্রতি মাসে ১৫ হাজার টাকা করে ভাড়া হলে বাড়িওয়ালার লগ্নি টাকা উঠে আসতে সময় লাগে পাঁচ-ছয় বছর। এ ছাড়া ফ্ল্যাটের নানা রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কিছু অর্থ খরচ করতে হয়। দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভাড়া কিছুটা না বাড়ালে বাড়িওয়ালাদের গতি থাকে না। আবার সরকার প্রতি অর্থবছরের বাজেটে গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের দাম বাড়ায়। গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মীদের খুশি রাখতেও কিছু টাকা খরচ করতে হয়। এসবের বিল মিটিয়ে বাড়িওয়ালার হাতে খুব বেশি টাকা থাকে না।
অনেক বাসায় ভাড়াটে নিজ নিজ বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিল পরিশোধ করেন। সেখানে দুষ্ট প্রকৃতির ও চতুর ভাড়াটে অনেক বিল জমিয়ে সরে পড়েন। অন্যদিকে বাড়ির পৌরকর, খাজনা ইত্যাদি পরিশোধ করতেও জায়গায় জায়গায় উৎকোচ দিতে হয়। তাই বলা যায়, সব বাড়িওয়ালা অযৌক্তিক ভাড়া নেন না। আবার কিছু বাড়িওয়ালা সত্যিই অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বাড়ান। এটা বন্ধ করা দরকার। গুটিকয়েক বাড়িওয়ালার অসাধুতার দায়ভার সব বাড়িওয়ালা কেন নেবেন?
আর ভাড়াটেরাও সব ক্ষেত্রে সঠিক আচরণ করেন না। অনেক ভাড়াটে দরকার ছাড়াই পানির কল ছেড়ে কিংবা বৈদ্যুতিক বাতি জ্বেলে রাখেন। আবার কোনো কোনো ভাড়াটে বাড়ি ভাড়ার সময় দু-তিন সদস্যের নির্ঝঞ্ঝাট পরিবারের কথা বলে বাসায় তোলেন তারও বেশি সদস্য।
বাড়িওয়ালাকে মূর্তিমান আতঙ্ক না ভেবে সমঝোতা ও আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করে বাড়িওয়ালা ও ভাড়াটের সম্পর্ক সুদৃঢ় করা যায়। আর ভাড়াটেরা সরকারিভাবে যে আইন প্রণয়নের কথা বলছেন, সেটি প্রণয়ন করা হোক। কিন্তু আইনে যেন উভয় পক্ষের স্বার্থ বিবেচনা করা হয়।
মোহাম্মদ হানিফ
১ গোয়ালঘাট, ঢাকা
Source: Daily Prothom-alo

No comments:

Post a Comment