Pages

Search This Blog

Sunday, October 31, 2010

নগরীর গ্রন্থাগার

নগরীর গ্রন্থাগার

জ্ঞানপিপাসুদের সঠিক স্থান

কটি জাতির উন্নতি নির্ভর করে শিক্ষার ওপর। শুধু পুঁথিগত শিক্ষাই নয়, পাশাপাশি প্রয়োজন আরো নানা বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করা। সেই জ্ঞান অর্জনের জন্য গ্রন্থাগারের ভূমিকা অপরিসীম। নগরীতে সরকারি এবং বেসরকারি মিলিয়ে সাধারণ গ্রন্থাগার আছে সাড়ে ৩শর ওপরে। নগরীর উলেস্নখযোগ্য কয়েকটি গ্রন্থাগার নিয়ে আমাদের এবারের মূল ফিচার। লিখেছেন খালেদ আহমেদ

সুফিয়া কামাল জাতীয় গ্রন্থাগার

রাজধানীর সবচেয়ে জনপ্রিয় গ্রন্থাগার হলো সুফিয়া কামাল জাতীয় গ্রন্থাগার। ১৯৫৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি এ গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হয়। সবার জন্য উন্মুক্ত এ গ্রন্থাগারে বইয়ের সংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার। এখানে অধিকসংখ্যক পাঠকের সমাবেশ ঘটে। এই গ্রন্থাগারে প্রতিদিন প্রায় ২৫টি জাতীয় দৈনিক পড়া যায়। সেইসাথে নিয়মিত ২৫টি বিদেশি ম্যাগাজিনও থাকে। এই গ্রন্থাগারের আসন সংখ্যা ৪শ। প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার পাঠকের সমাগম ঘটে। শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ১০ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, শাহবাগে এই গ্রন্থাগারের অবস্থান। ফোন : ৮৬২৬০০১।

বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭২ সালের ৬ নভেম্বর বাংলাদেশ জাতীয় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠিত হয়। ৫ লাখের ওপর সংগ্রহ আছে এ গ্রন্থাগারে। আসন সংখ্যা ১৫০ হলেও প্রতিদিন ৫ শতাধিক পাঠকের আগমণ ঘটে। এছাড়া সংবাদপত্র, ম্যাপ এবং মাইক্রোফিল্মের আছে বড় একটা সংগ্রহ। যে কেউ এখানে এসে পড়াশোনা করতে পারেন। তবে কোনো বই বাসায় নেওয়া বা ফটোকপি করা যায় না। তবে ক্যামেরার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অংশের ছবি তুলে নেওয়া যায়। শুক্রবার ও শনিবার এবং অন্যান্য ছুটির দিন ছাড়া সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পড়া যায়। গ্রন্থাগারটি ৩২ বিচারপতি এস এম মোর্শেদ সরণি, আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। ফোন : ৯১২৯৯৯২, ৯১১২৭৩৩।

জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৮৭ সালের ২৬ মার্চ এ গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হয়। এর সংগ্রহশালায় আছে প্রায় ১৫ হাজার বই। কেউ বাসায় নিতে চাইলে, বার্ষিক ১০০ টাকা চাঁদা দিয়ে সদস্য হতে হয়। এরপর ফেরতযোগ্য ১শ থেকে ৪শ টাকা পর্যন্ত নগদ জমা দিয়ে, সর্বোচ্চ চারটি বই ২০ দিনের জন্য বাসায় নেওয়া যায়। যেকোনো পাঠক খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করে পাঠাগারটিতে পড়তে পারেন। শুক্র, শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিন বাদে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। এটি ৫/সি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তানে অবস্থিত। ফোন : ৯৫৫৫৭৪৩।

ইসলামিক ফাউন্ডেশন

জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের তিন তলায় ১৯৭৫ সালে এ গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। অনেকেই ইসলাম ধর্মের নানা হাদিস এবং ইতিহাস জানার জন্য বিভিন্ন স্থানে ধরনা দিয়েও সুরাহা পান না। এ সব বিষয়ে ইতিহাস, প্রবন্ধ, হাদিস, কোরআনসহ নানা বিষয়ে বিশাল সংগ্রহ রয়েছে এখানে। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এ গ্রন্থাগারে প্রায় ৭৫ হাজার বইয়ের সংগ্রহ রয়েছে। আসন সংখ্যা ২ শ হলেও_প্রতিদিন প্রায় ৫ শতাধিক পাঠকের সমাগম ঘটে। সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে এশার নামাজের আগ পর্যন্ত এ লাইব্রেরি খোলা থাকে। ফোন : ৯৫৫৬৭২২।

রাজা রামমোহন লাইব্রেরি

পুরান ঢাকার পাটুয়াটুলিতে ব্রাহ্মসমাজ ভবনের পাশেই একটি ভবনের দোতলায় এ পাঠাগারটির অবস্থান। এর পরিচালনাও করেন ঢাকার ব্রাহ্মসমাজ। তবে এখন আর মানুষের পদচারণায় মুখর হয় না কক্ষটি। ঢাকার পুরোনো প্রসিদ্ধ এ গ্রন্থাগারটি সাত বছর ধরে তালাবদ্ধ রয়েছে। জানা গেছে, ব্রাহ্মসমাজের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক অভয় চন্দ্র দাস ১৮৭১ সালের ১৮ জানুয়ারিতে প্রতিষ্ঠা করেন এ পাঠাগারটি। তিনি ব্রাহ্ম মন্দিরের দোতালার একটি কক্ষে অল্প কিছু বইপত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে ১৯১০ সালে তৎকালীন আইসিএস ও ভাইসরয় কাউন্সিলের সদস্য কেজি গুপ্ত পাঠাগার ভবন উদ্বোধন করেন। তখন সংগ্রহশালায় বই ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার। এ পাঠাগারে পড়তে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে কবি বুদ্ধদেব বসু, জীবনানন্দ দাশ, অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল হাই, সুফি মোতাহার হোসেন, বেগম সুফিয়া কামাল, কবি শামসুর রাহমানের নাম উলেস্নখযোগ্য। তবে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে লুণ্ঠনের শিকার হয়। স্বাধীনতার পর আবার পাঠাগারটি খোলা হয়। তবে গত সাত বছর ধরে গ্রন্থাগারটি বন্ধ রয়েছে। গ্রন্থাগারটির সংশিস্নষ্টরা জানান, অচিরেই ঢাকার এই ঐতিহ্যবাহী গ্রন্থাগারটি পাঠকদের জন্য খুলে দিতে।

বার্ক লাইব্রেরি

বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিসার্চ ইনস্টিটিউট (বার্ক) লাইব্রেরি। এখানে কৃষিভিত্তিক বই এবং জার্নালের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার। আসন সংখ্যা ৫০। যে কেউ ইচ্ছা করলেই এ লাইব্রেরিতে পড়তে পারেন। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। ফার্মগেটের খামারবাড়ি এলাকার ভেতর এ গ্রন্থাগারের অবস্থান।

ফোন : ৯১৩২৪১৫।

নজরুল ইনস্টিটিউট

১৯৮৫ সালের ১২ জুন ধানমন্ডির কবি ভবনে এ গ্রন্থাগারটি স্থাপিত হয়। কাজী নজরুল ইসলামের সবকিছু একত্রে পেতে এ গ্রন্থাগারের তুলনা নেই। তার সাহিত্য, সংগীত, সম্পাদনা ও প্রকাশনা, হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি,পত্রাবলি, বিভিন্ন রেকর্ডের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে গড়ে ওঠেছে এটি। এখানে তার সৃষ্টিকর্ম নিয়ে গবেষণাধর্মী বইও রয়েছে। এখানে বইয়ের সংখ্যা ৮ হাজার এবং আসন সংখ্যা ১০। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি এবং অন্যান্য সরকারি ছুটিরদিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা থাকে। বাড়ি ৩০০বি, রোড ২৮ (পুরোনো), ধানমণ্ডি আ/এ-তে অবস্থিত। ফোন : ৯১১৪৬০২।

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র

'আলোকিত মানুষ চাই' শেস্নাগানকে লালন করে অধ্যাপক আবদুলস্নাহ আবু সায়ীদ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা করেন ১৯৭৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর। ইতিমধ্যে এ পাঠাগারটি পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। এখানে বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। সাধারণ সদস্য হওয়ার জন্য ২শ টাকা এবং বিশেষ সদস্যের জন্য ৪শ টাকা ফেরতযোগ্য জামানত দিতে হয়। মাসিক চাঁদা ১০ টাকা। সদস্যরা একসঙ্গে দুটি বই দুই সপ্তাহের জন্য পড়ার জন্য নিতে পারে। এ কেন্দ্রের রয়েছে বেশ কিছু ভ্রাম্যমান লাইব্রেরি। এ বিষয়টি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এর সদস্য হতে সাধারণ ১শ এবং বিশেষ ২শ টাকা ফেরতযোগ্য জামানত দিতে হয়। সদস্য না হয়েও শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন যে কেউ বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বই পড়তে পারেন। ১৪ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, বাংলামোটরে এর অবস্থান। ফোন : ৯৬৬০৮১২।

ব্যান্সডক লাইব্রেরি

নানা বিজ্ঞান বিষয়ক বই, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পত্রিকা এবং গবেষণাপত্রের বিশাল সংগ্রহ রয়েছে ব্যান্সডক লাইব্রেরিতে। এখানে সংগ্রহে আছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ের ২০ হাজার পাঠ্যবই এবং ২৫ হাজার জার্নাল। আসন সংখ্যা শতাধিক। প্রতিদিন দুই থেকে তিনশত পাঠক আসেন এখানে। গবেষকদের জন্য ইন্টারনেট সুবিধাসংবলিত ৪০টি কম্পিউটার রয়েছে এর ল্যাবে। প্রয়োজনীয় অংশ ফটোকপিও করা যায়। শুক্র, শনিবার এবং সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত পেতে পারেন এই লাইব্রেরির সেবা। বিসিএসআইআর ক্যাম্পাস (সায়েন্স ল্যাবরেটরি), মিরপুর রোডে এর অবস্থান।

ফোন : ৯৬৬৪২৫০, ৮৬১০২২৪।

ব্রিটিশ কাউন্সিল

ইংরেজি ভাষায় লিখিত আন্তর্জাতিক মানের একাডেমিক ও নন-একাডেমিক বইপত্র রয়েছে এখানে। সেইসাথে সাইবার ক্যাফে এবং ইংরেজি ভাষা শেখার সুবিধা পাওয়া যাবে। এই লাইব্রেরির বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার। আসন সংখ্যা ৩শ হলেও প্রতিদিন ৫ শতাধিক পাঠক আসেন এখানে। ৫ ফুলার রোড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় এ প্রতিষ্ঠান অবস্থিত। ফোন : ৮৬১৮৯০৫-৭।
Source: Daily Ittefaq

No comments:

Post a Comment